ঢাকা: মওলানা সাদ কন্ধলভির অনুসারী মুরুব্বিদের নামে মামলা ও দেশব্যাপী সাথীদের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের সাদপন্থি অংশের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম। এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন, গ্রেফতার ইত্যাদি বন্ধ করা না হলে দেশে ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মো. সায়েম বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের শীর্ষ অসুস্থ বর্ষীয়ান মুরুব্বি হজরত সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ মূলধারার সাথীদের নামে মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ সাদপন্থিদের ওপর সাত বছর জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্যের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে গুজব, অপপ্রচার ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাবলিগের কাজকে মানুনুল হকের মতো রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন— এমন ধারণার কথা বলেন মো. সায়েম।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, দুদিন আগে সমাবেশ করে মামুনুল হক তুরাগ তীর রক্তে লাল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে টঙ্গীর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এর আগে ৫ নভেম্বর মাদরাসার ছাত্রদের এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে তাবলীগ জামাতের সাদপন্থিদের সব কাজ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ও কাকরাইল মসজিদ অবৈধ দখলের ঘোষণা দিয়ে উগ্রপন্থি আলেমরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন।
১৭ ডিসেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম মধ্যস্থতা করে তাবলিগের দুপক্ষের বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। পরে দিবাগত রাতে দুপক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন, আহত হন অর্ধ শতাধিক।
মো. সায়েম বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ওই রাতে বিষয়টি মীমাংসার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু যারা এই বিরোধ ধরে রেখে ও মীমাংসা না করে একচেটিয়াভাবে তাবলিগের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তারা সংঘাত তৈরি করে রাস্তায় থাকা আমাদের সাথীদের ওপর হামলা করেছে। গতকাল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় বেলাল হোসেনের নাম উল্লেখ করলেও তিনি আমাদেই সাথী। আমরা এ বিষয়ে মামলা দিতে গেলে থানা মামলা নেয়নি।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মো. সায়েম লিখেছেন, আমাদের সাথী নিহত হওয়ার পরেও আমরা মামলা করতে পারছি না, যা চরম অমানবিক বৈষম্য। উলটো আমাদের মুরুব্বি মুফতি মুআজ বিন নূরের মাদরাসায় হামলা ও তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমরা দ্রুত তার মুক্তি চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে আমাদের সাথীদের ওপর কওমি মাদরাসার ছেলেদের দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা-বাড়িঘরে আমাদের ওপর বর্বর হামলা করা হচ্ছে। আমরা চাই, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক। কিন্তু এ পরিস্থিতি, বৈষম্য ও জুলুম অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
সব বিষয়েই সাদপন্থিদের ওপর বৈষম্য করা হচ্ছে অভিযোগ করে সায়েম বলেন, ‘আমাদের শত শত আহত সাথীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতাল থেকে একাধিক সাথীকে অপহরণ করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমেও এসেছে। কিছু সাথীকে গুম করার মতো ঘটনা ঘটেছে। টঙ্গী ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করলে আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে গতকাল ময়দান খালি করলেও সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না রেখে তাদেরই আবার ময়দান বুঝিয়ে দিয়েছে। সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সরাসরি বৈষম্য করা হচ্ছে।’
চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন সাদপন্থি তাবলিগের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম। বলেন, সারা দেশে আমাদের ওপর আক্রমণ, নির্যাতন, গ্রেফতার এবং মসজিদে মসজিদে নামাজ ও ইবাদতে বাধা দেওয়া আইন করে বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংঘাত ও গৃহবিবাদের দিকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। সবার ধর্মীয় ও সংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বলেন, সরকার, মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘসহ সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা আমরা কামনা করছি।