Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খরচ না হওয়ায় পাইপলাইনে পড়ে আছে বৈদেশিক সহায়তা


১৫ জুন ২০১৮ ১১:৪৬

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: যখন কোনো দাতা দেশ বা সংস্থার সঙ্গে ঋণ বা অনুদান চুক্তি সই হয় তখন তা পাইপলাইন হিসেবে জমা হয়। তবে, খরচ না হলে অর্থ ছাড় করে না দাতা দেশ বা সংস্থাগুলো। সেই হিসেবে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত এরকম প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) দাঁড়ায় ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল অর্থ জমা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত অর্থ খরচ করতে পারছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। ফলে, দীর্ঘ হচ্ছে পাইপলাইন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় না করা অদক্ষতা হিসেবে ধরে নেয় দাতা গোষ্ঠীগুলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইপলাইন থাকবেই। পাইপলাইনে টাকা না থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে কীভাবে?’

তিনি জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একবারেই ১১ বিলিয়ন ডলার এবং চীনের সঙ্গে পুরো  প্রকল্পের টাকারই এক সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্প তো বাস্তবায়ন হবে ৫ থেকে ৬ বছরে। তাছাড়া, বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের অবস্থা এখন সব চেয়ে ভালো। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বৈদেশিক অর্থ ছাড় সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। গত ১০ মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই ছাড় হয়েছিল ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

তিনি আরও জানান, চীন, ভারত ও আইডিবির অর্থছাড়ের অবস্থা খারাপ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের অবস্থা ভালো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত পাইপলাইনে জমা ছিল ৩ হাজার ৫৭৪ কোটি ডলার। এছাড়া, ঋণের স্থিতি (চলমান ঋণ) ছিল ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার। এটি গত মার্চ মার্চে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৮ কোটি মার্কিন ডলারে।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈদেশিক সহায়তার পাইপলাইন দীর্ঘ হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণের টাকার ব্যবহার বাড়াতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোকে যুক্ত করা যেতে পারে। ’

ইআরডির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করতে না পারা এবং পাইপলাইন জমার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে, দাতাদের আমলাতান্ত্রিকতা, বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচ করতে গিয়ে নানা প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা, দুর্নীতির সুযোগ কম থাকা, ব্যাপক তদারকি, ধাপে ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা, ইংরেজি ভাষায় পশ্চাৎপদতা এবং সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৫৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু খরচ করতে না পারায় চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে সাত হাজার কোটি টাকা ফেরত দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে পাঁচ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা খরচ করতে না পারায় বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। সেখান থেকে তিন হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেয়া হয় ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাড়াহুড়ো কিংবা শর্ট কাট প্রক্রিয়ায় বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয়ের সুযোগ নেই। নিয়মকে পাশ কাটিয়ে কেউ এ অর্থ খরচ করতে পারবেন না। অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রক্রিয়া পার করতে হয়। অর্থাৎ সরকার ও উন্নয়নসহযোগী দুপক্ষের অনেকগুলো শর্ত থাকে। এ সব শর্ত পূরণ করেই অর্থ পেতে হয়।’

সারাবাংলা/জেজে/জেএএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর