অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪
ভীতি দূর করে তথ্য সংগ্রহ করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা
২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৭ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৯
সাধারণ মানুষের মনের ভয়-ভীতি, আশঙ্কা ও কৌতূহল জয় করে তৃণমূল পর্যায় থেকে আর্থিক কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করছেন অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর দায়িত্বে নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীরা। তথ্য প্রদানে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে সবার কাছ থেকেই। ট্যাবের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে সব তথ্য।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অর্থনৈতিক শুমারির কাজ পরিদর্শনকালে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন শুমারির দায়িত্বে নিয়োজিত মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহকারীরা।
তথ্য সংগ্রহকারীরা জানান, তথ্য সংগ্রহে কোথাও কোথাও চ্যালেঞ্জ যে নেই -তা নয়, তবে বড় ধরনের কোন সমস্যা হচ্ছে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখার সময় কালীগঞ্জের নাগরি ইউনিয়নের স্বাধীনতা চত্বরের (সাবেক ময়েজ উদ্দিন চত্বর) নিশাদ স্টোরে দেখা হয় গণণাকারী মো.হাসমত উলাহর সঙ্গে। তিনি ট্যাব হাতে এই স্টোরের মালিক (মুদি ও চা বিক্রেতা) আসলামের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রথম দিকে আসলাম তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন, তার আয়ের উপর কর ধার্য করা হবে কি না। শেষ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহকারী তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, এসব তথ্য সরকারি নীতি নির্ধারণের কাজে ব্যবহার হবে। এর সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের কোন সম্পর্ক নেই। পরে সুন্দরভাবে সব তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তিনি। এ সময় আসলাম বলেন, আমরা ছোট ব্যবসা করি।এর হিসাব সরকারের কাছে থাকলে আমাদেরই ভবিষ্যৎ ভালো হবে। তাই আমি খুশি।
একই ইউনিয়নের গলান নাওটানা মোড়ের মাসুক স্টোরের মালিক মাসুক সহজেই তথ্য সংগ্রহকারীকে তার ব্যবসার সমস্যা, সুবিধা, আয় সব বিষয়েই তথ্য দেন। তিনি বলেন, দেশের কাজে সামান্য অবদান রাখতে পারলেই খুশি।
পানজোরা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের অটোচালক কাদের শেখের বাড়িয়ে দিয়ে দেখা যায় তিনি সকালেই বেরিয়ে গেছেন। এ সময় তথ্যসংগ্রহকারী নুশরাত জাহান তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। নুশরাত জানান, তাদের নিজস্ব অটো রিকশা আছে। এর মালিকের দেখা পাওয়া কঠিন। তাই তার স্ত্রীর কাছে তথ্য নিচ্ছি।
পানজোরার সুখপাড়া গ্রামের সামসুন রাহারের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি পাট এবং কটন সুতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সিঁকে তৈরি করছেন। তার কাছে কাজ নিয়ে ওই গ্রামের আরও ৩০ জন নারী এ কাজ করছেন। তারা সবাই মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। এসব পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রপ্তানি হয়। তিনি জানান, পরিবারের কাজে ফাঁকে এসব তৈরি করে ভালোই আয় হচ্ছে।
এ সময় তথ্য সংগ্রহকারী তানজিলা আক্তার তন্বী জানান, আমার লক্ষ্য হলো ১৫২টি আর্থিক কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা। আমি এরই মধ্যে ৭৭টির তথ্য নিয়েছি। সবাই খুব সহযোগিতা করছেন।
প্রায় একই রকম মন্তব্য করেন হাসমত উলাহসহ অন্য তথ্য সংগ্রহকারীরা।
মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের কাজের দেখভাল করছিলেন সুপারভাইজার এলাকা-৭ এর সুপারভাইজার সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, আমার দায়িত্বে ৬ জন তথ্য সংগ্রহকারী আছেন। তারা সবাই দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করছেন।
গাজীপুর জেলা শুমারি সমন্বয়কারী মুরশিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার দায়িত্বে ৭৭৯ জন তথ্য সংগ্রহকারী আছেন। প্রথম দিকে কোথায় সমস্যা হলো তথ্য সংগ্রহকারীরা নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করেন। তারা না পেলে সুপারভাইজারকে জানান। এতেও সমাধান না হলে আমাকে জানালে আমি ফোনে অথবা নিজেই হাজির হয়ে যাই ঘটনাস্থলে। এভাবে কিছু সমস্যার সমাধান করেছি।এখনো বড় কোন সমস্যা হয়নি।
কথা হয় সুপারভাইজিং অফিসার উপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে বড় কারখানায় মাঝে মধ্যে তথ্য সংগ্রহগকারীদের ঢুকতে সমস্যা হয়। আমরা তখন সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নেই। তবে এখন পর্যন্ত সমস্যা কারণে তথ্য না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চতুর্থবারের মতো এই অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বিবিএস। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবার মাঠ থেকে আর্থিক কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করছেন ৯৫ হাজার সংগ্রহকারী।
অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ এর প্রকল্প পরিচালক এসএম শাকিল আখতার সারাবাংলাকে জানান, সারাদেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারি এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বিবিএস। অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে প্রায় ৭০ টি প্রশ্ন উঠে আসবে। এবারই প্রথম ট্যাবের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতিতে এই শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই লিস্টিং এর মাধ্যমে ১ কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে এবং এর বাইরে থেকেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবার শুমারিই প্রথমবারের মতো দেশে কতজন বিদেশী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের পদে কর্মরত এবং নারী-পুরুষ কতজন সেসব তথ্য তুলে ধরা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস