Saturday 21 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশকে মেডিকেল ট্যুরিজম হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:০০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৯

শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতা : আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়

ঢাকা: বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়া দেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যর্থতা প্রকাশ করে। এ জন্য মেডিকেল ট্যুরিজমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে— যার বেশিরভাগই ভারতের দ্রুত-বর্ধনশীল স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করছে। এ প্রেক্ষিতে দেশের স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনোয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মেডিকেল ট্যুরিজম হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতা : আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে এমন পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. নাজমুল হোসেনসহ অন্যান্যরা অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি সাহসী ও বাস্তবসম্মত ধারণা হলো বাংলাদেশকে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম হাব হিসেবে গড়ে তোলা। এর খরচ-সুবিধা এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ব্যবহার করে দেশটি প্রতিবেশী অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রোগীদের আকৃষ্ট করতে পারে।

বক্তারা বলেন, মেডিকেল ট্যুরিজম কেবল অন্য একটি দেশে সেবা নেওয়া নয়, এটি একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা এবং দুর্বলতার প্রতিফলন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের। বর্তমানে চিকিৎসা পর্যটন হলো একটি ১০০ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক ব্যবসা। যা অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণ করে এবং স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে। ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো পাওয়ার হাউস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা পশ্চিমা খরচের ভগ্নাংশে অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রদান করে।

বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বৈঠকে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। এটা নিছক পরিসংখ্যান নয়; বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাত নাগরিকদের চাহিদার সাথে কতটুকু তাল মিলাতে পারছে তার ইঙ্গিত দেয়।

বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ মেডিকেল ট্যুরিজমের শিকারে পরিণত হয়েছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক অভিজাত শ্রেণীর লোক চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতো, বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া জোয়ারে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের মান উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বিপণন প্রচারণা দরকার। এরমাধ্যমে বাংলাদেশের ভূমিকা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার মানচিত্রে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এই উদ্যোগে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। কল্পনা করুন, এমন একটি হাসপাতাল যা থাইল্যান্ডের বিখ্যাত হাসপাতালের সমকক্ষ প্যাকেজ অফার করছে সাশ্রয়ী মূল্যের, তবে মানের ক্ষেত্রে আপসহীন। অন্যদিকে, মেডিকেল ট্যুরিস্টদের বিদেশমুখী প্রবাহ ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এবং শুরুতেই রোগ নির্মূলের ওপর জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তারা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রচারণা, প্রাথমিক চিকিৎসা অবকাঠামো এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অনেক রোগের স্থানীয় সমাধান করতে পারে, ফলে ব্যয়বহুল এবং রোগের শেষ পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন কমে আসবে।

উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের সময়মতো শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনা জটিলতা হ্রাস করতে পারে, যা বর্তমানে রোগীদের বিদেশি হাসপাতালের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সরকারের উচিত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোখাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া, যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা জায়ান্টদের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা এই অগ্রগতিকে দ্রুততর করতে পারে, যা নিয়ে আসবে দক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয়।

স্বাস্থ্যখাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশকে তার চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করতে হবে এবং মেধা ধরে রাখতে শক্তিশালী প্রণোদনা ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। যাতে মেধাবীরা দেশে ফিরে আসে অত্যাধুনিক সুবিধা এবং পেশাগত সন্তুষ্টি ও প্রতিযোগিতামূলক বেতনের আকর্ষণে বিদেশে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি ডাক্তাররা দেশে ফিরে এসে কাজ করছেন। দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে মোকাবিলা করার জন্য স্বচ্ছতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই প্রচেষ্টাগুলোর ভিত্তি হতে হবে।

সারাবাংলা/এসবি/আরএস

স্বাস্থ্য খাত

বিজ্ঞাপন

আলবেনিয়ায় টিকটক ১ বছর নিষিদ্ধ
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০৭

আরো

সম্পর্কিত খবর