এসব আমাদের এখতিয়ারের বাইরে— সব দল নিয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে বদিউল
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪২ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রসঙ্গে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের’ প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমাদের কাজ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া। কারা নির্বাচনে আসবে, আসবে না বা কারা যোগ্য, যোগ্য না সেটা দেখার পুরো এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের, এসব আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।’
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সব আইন জটিলতা পেরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আশা রাখি ফিরবে। এখানে বেশকিছু পদক্ষেপ আছে। হাইকোর্টের যে রায়, সেটা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। আমরা আশা করছি, সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের যে রায় সেটার পক্ষেই থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে আরেকটা মামলা যে আছে সেটা নিয়েও আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। সেটার রিভিউর ব্যাপারে।’
‘এরপর সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দেবে। এসব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সংসদে বিল উত্থাপন করতে হবে। সে বিলটা পাস হওয়ার পর এসব অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। অনেক প্রক্রিয়া আছে।’
আগামী নির্বাচনে কী ধরণের সংস্কার আসতে পারে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ, আবেগ ও উচ্ছ্বাস সেটা আমরা উপলব্ধি করছি। আমরা কোথাও গেলে মানুষ দুটো কথা বলতে চায়, তাদের মনের আকুতি ব্যক্ত করতে চায়। তারা বিভিন্ন প্রস্তাব দিতে চায়। ইমেইলে হাজার হাজার মানুষ মতামত দিচ্ছে। তাদের সবার আকুতি একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, যার মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি একটি ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়। এটা জন-আকাঙক্ষা , সে সঙ্গে আমাদেরও আকাঙক্ষা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রস্তাবগুলো দেব। মানুষের কাছ থেকে যেগুলো শুনেছি ও আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি, অভিজ্ঞতা সেগুলা ব্যবহার করে আমরা কতগুলো প্রস্তাব দেব। কিন্তু বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব নয়। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ক করবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার সেখানে ভূমিকা থাকবে।’
নির্বাচনে আইনের অপব্যবহার করা হয়, এটা নিয়ে সংস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক প্রশাসনের কর্মকর্তারা কথা বলেছেন। উনারা আর ব্যবহার হতে চান না। উনারাও চান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেভাবেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবেন তারা। নির্বাচনী হলফনায় তথ্য গোপন করা হয়। এগুলো যাতে যাচাই-বাছাই করা হয় সে প্রস্তাবনাও করছি। আমাদের সব প্রস্তাব এখনও চুড়ান্ত হয়নি। আমরা সবগুলোকে বিবেচনায় নিচ্ছি।’
কতদিনের মধ্যে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছেন ৩ ডিসেম্বর। আমরা আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের আগেই আমরা প্রতিবেদন জমা দেব। নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক দাবি আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচনী ট্রেনটা যেন ট্র্যাকে ওঠে। এজন্য প্রথম কাজ ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা। তাই তারা কমিশন গঠন করেছেন। আমাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে না।’
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই দাবি তুলছেন, এ বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে এমন প্রশ্নে সংস্কার প্রধান বলেন, ‘আমাদের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে দুদিকেই আছে। প্রবল অবস্থান। উম্মুক্ত মনে আমরা এসব বিবেচনা করে সুপারিশ পেশ করার চেষ্টা করব। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আপনাদেরও সে চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আমরা সুদিন ফিরে পাওয়ার আশা রাখতে পারি।
অনেক দল গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ থাকবে কি না জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সুপারিশ থাকবে। ওইসব প্রশাসনিক ও আইনগত সিদ্ধান্ত। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যেমে সেসব সিদ্ধান্ত আসবে। আগে যা ঘটেছে তার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে সেটা ফিরিয়ে আনতে সবাই বদ্ধপরিকর।’
সামনের সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবস্থা থাকবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আর প্রশ্নই আসে না। এটা আর হবে না। নির্বাচন কমিশন বলেছে। আমাদেরও একই অবস্থান।’
এসময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলী, আবদুল আলীম এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এসআর
চট্টগ্রাম নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বদিউল আলম মজুমদার