সমঝোতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা
তাবলিগের সমস্যা সমাধানে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ ১০ দাবি সাদপন্থিদের
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৬ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৮
ঢাকা: তাবলিগের চলমান সমস্যা সমাধানে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন সাদপন্থি মুসল্লিরা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই পক্ষের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্মীয় ও সংবিধানিক যৌক্তিক অধিকার নিশ্চিত করা না হলে দেশে ভয়াবহ অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা দূর করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা যথেষ্ট নন। কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টার মধ্যে আমরা এ বিষয়ে নিরপেক্ষতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত করছি। তারা বিচার-বিশ্লেষণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের আগেই একপক্ষের হয়ে যেভাবে কথা বলছেন, তা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সাদপন্থি মুসল্লিরা যেসব দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হলো—
- তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সা’দ কাম্বলভীর অনুসারী সকল মুরুব্বিদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা;
- আতিয়া বিন নূরকে অতিসত্বর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া;
- কাকরাইল মসজিদ টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ও সারা দেশে মসজিদভিত্তিক তাবলিগের কাজকে সমান অধিকারের ভিত্তিতে পরিচালনার পরিবেশ তৈরি করা;
- তাবলিগের যেকোনো বিষয়ে হেফাজত বা ‘জোবায়েরপন্থি’রা এক পক্ষের ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরিহার করা;
- সঠিক সময়ে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দান আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে ইজতেমা আয়োজনের সকল কার্যক্রম নিশ্চিত করা;
- সারা দেশে ‘জোবায়েরপন্থি’ ও হেফাজতকর্মীরা নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের ওপর যে জুলুম ও নির্ঘাতন চালাচ্ছে, সেসবের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
- বারবার তাবলিগের সাথীদের এমন সংঘর্ষ যেন না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া তাবলিগের উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা;
- বিদেশি মেহমানদের ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা;
- সারা দেশে তাবলিগের সাথীদের পরিচালিত মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; এবং
- যেকোনো অবস্থায় সাধারণ মুসল্লি, গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসব কাজে মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে যে দুঃখজনক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, রাজনৈতিক আলেমরা এ ঘটনাকে তাদের স্বার্থসিদ্ধির প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে দেশব্যাপী ‘ম্যাসাকার’ করে চলেছেন। মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীদের ঘর-বাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সাথীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ হচ্ছে। মামলা ছাড়াই সাথীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও ঘরের পর্দানশীন মা-বোনদের সঙ্গেও সম্মানজনক আচরণ করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন মসজিদে সাথীদের নামাজ ও ইবাদত করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অল্পসংখ্যক পুলিশের সহযোগিতায় একদল উগ্রপন্থি এমনকি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়েও তাবলিগের সাথীদের মারধর করছে। অন্যায়ভাবে এক পক্ষের মুখপাত্রকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদেশি মেহমানমানদের ওপরও হামলা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘জোবায়েরপন্থি’রা কয়েকটি জায়গায় সাংবাদিকদেও ওপরও হামলা করেছে। এসব ঘটনা ইসলামকে বিশ্বের দরবারে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রকাশ্য ইন্ধন, উসকানি ও মদতে টঙ্গীতে দুপক্ষের মধ্যে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সেটাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ভয়াবহ এক ‘মব জাস্টিসে’র পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব ইজতেমার মতো একটি সম্মেলনকে নিজেদের দখলে নেয়ার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। । এসব কারণে বিশ্ব ইজতেমা আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
সারাবাংলা/ এএইচএইচ/আরএস