Monday 23 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারি অফিস হবে মসজিদের মতো, যেখানে শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৬

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের সব সরকারি অফিস মসজিদের মতো হতে হবে, যেখানে কোনো শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় এ বক্তব্য এসেছে। প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজ বলে মত এসেছে ওই সভায়।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা ‘গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের’ সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, ‘মসজিদে যখন মানুষ যায় তখন কি মানুষ বৈষম্য করে? যে আমার টাকা বেশি আছে দেখে আমি সামনের কাতারে নামাজ পড়ব? যে ভ্যানগাড়ি চালায় সে পেছনে দাঁড়াবে? এরকম শ্রেণিবিভাজন আছে কিনা। প্রত্যেকটা সরকারি অফিস মসজিদের মতো হতে হবে। সেখানে কোনো শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না সেবার ক্ষেত্রে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৬ বছরের যে ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি, তারপর এ সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে। এ সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজ কোনটা হতে পারে? প্রধান কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রশাসনে যে রাজনৈতিক প্রভাব, এটাকে আলাদা করা।’

মেহেদী হাসান বলেন, ‘একজন বলছিলেন যে সাব রেজিস্ট্রার অফিসার সপ্তাহে দুই দিন অফিস করেন। আমাদের কমিশনের পক্ষ থেকে এটাই বলার, জনপ্রশাসন সচিব একটি মিটিং এ বলেছিলেন যে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুইদিন আসে, যেদিন আসবে সেদিন তাকে তালা মেরে বসে থাকবেন। তারপর অফিস করতে দেবেন। সবকিছু মিলিয়ে যে হোলিস্টিক চিন্তাভাবনা করার সময় ও সুযোগ সেটা কমিশন হয়তো পাচ্ছে না। আমি ব্যক্তিভাবে এটা মনে করেছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। যেখানে সব ক্ষমতার উৎস জনগণ সেখানে সর্বোচ্চ জবাবদিহিতার মালিক হচ্ছে জনগণ। আমরা কি করতে পারি? আমরা যেখানে যে ঘুষ নিতে চাচ্ছে, সেখানে নগদ প্রতিহত করতে হবে। যে রাজনীতিবিদ তার কমিটমেন্টের বাইরে কাজ করবে তাকে নগদ প্রতিহত করতে হবে।’

কমিশনের সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ১৬ বছর আমাদেরকে একটা সংস্কৃতির মধ্যে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। সে সংস্কৃতি কি? প্রত্যেকে আখের গোছানোর চেষ্টা করা। আপনারা পত্রিকাগুলো দেখেন। সংস্কার কমিশন কাজ করছে। ক্যাডার ক্যাডার মারামারি লেগে গেছে। এই যে একটা আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা, এটা শুধুমাত্র প্রশাসনিক না, শুধুমাত্র রাজনীতিদ না একেবারে রুট লেভেলে যে একজন দিনমজুর তার পর্যন্ত চলে গেছে।’

মেহেদী বলেন, ‘সরকারি অফিসে ঘুষ কারা দেয়? এ সংস্কৃতিটা কারা তৈরি করে? যাদের পকেটে টাকা আছে তারা। সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণি। এদের কারণে যাদের টাকা নেই তাদের উপর প্রভাব পড়ে। সরকারি অফিস থেকে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার চাকরিজীবন শেষ করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলবেন, সে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরছে। সে যে এই সংস্কৃতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার কথাটা আমি বলছি কিনা, সেটা দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসিক একটা পরিবর্তন দরকার। রেভল্যুশন হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু যারা বিপ্লবী তাদের মধ্যেও একটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে কি জন্য? সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের জন্য। বার বার বিপ্লব কেন হয়? আমাদের এই তিনটা জিনিস হয় না দেখে। আমাদের এ জায়গাগুলো চিন্তা করতে হবে।’

জনগণ সেবা পেতে যেন বৈষম্যের শিকার না হন উল্লেখ করে মেহেদি হাসান বলেন, ‘হাসিনা একজন ব্যক্তি। ফ্যাসিবাদ একটা আইডিওলজি। এগুলো যুগে যুগে বিদ্যমান ছিল, থাকবে। এগুলো যাতে আবার না আসে। অন্তর্বর্তী সরকার সাসটেইন করবে না। একটা গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলই শাসন করবে। এটাই নিয়ম এবং এটাই হবে। কিন্তু ওই রাজনৈতিক দল, যেই আসুক যেন গণতান্ত্রিক চিন্তার উপর থাকে।’

তিনি বলেন, ‘যে লোকটা আইন, প্রশাসন, ক্যাডার বুঝে না সেই লোকটা যেন সেবাটা সহজে পায়। বৈষম্য যেন না হয়। এ নিশ্চয়তাটুকু যদি না আসে। অনেক সংস্কার কমিশন অনেক ভালো ভালো কথা বলে গেছে। অনেক আইন হয়ে গেছে। নতুন কিছু নেই। ব্যাপারটা হচ্ছে প্রয়োগ নেই। যারা আইন করে তারাই ভাঙ্গে। শর্ষের মধ্যে যখন ভূত তখন ডাক্তার হিসেবে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে শর্ষের ভূত আমরা তাড়াতে পারি। যেখানে কঠোর হওয়ার দরকার সেখানে আমরা কঠোর হব। যেখানে নরম হওয়া দরকার সেখানে নরম হব।’

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আইয়ুব মিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাগরিকদের সকলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিভিন্ন আইন-কানুন এবং তার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। সেক্ষেত্রে একটা নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য জনপ্রশাসনের একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু অতীতে গত ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা দেখেছি এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠার প্রয়োজন ছিল সে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভঙ্গুর করা হয়েছে। একটা সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সকে নষ্ট করা হয়েছে। সেটা যেন না হয়। যা সাম্য, মানুষের যে সামাজিক সুবিচার, প্রত্যেকের সমান অধিকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু জন প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যদি অন্যায়ভাবে হয় তাহলে অন্য আরেকজনের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে কাজটি যেমন রাষ্ট্রের সরকারের জনপ্রশাসনের তেমনি বড় কাজটা আসলে নাগরিকদের। এ নাগরিকদের কাজটি করার জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার। ২৪ এর জুলাই আগস্টে যে আন্দোলন হয়েছে এটা কিন্তু নাগরিকদের অংশগ্রহণের কারণেই বড় ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। এটা কিন্তু বিশেষ কোনো শ্রেণি ক্যাটাগরি তারা করতে পারেননি। ফলে জনগণের সম্মিলিত শক্তি হলো সবচেয়ে বড় শক্তি।’

সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মো. হাফিজুর রহমান ভূঞা ও মিহরাজ আহমেদ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আইসি/এইচআই

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর