ফ্রেপডের কাছে ৩৬ বছর ধরে বেদখল জমি, উদ্ধারে তৎপর নয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) চার কাঠা জমিতে ভবন তুলে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে ব্যবহার করছে শিক্ষা প্রকল্প ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশন (ফ্রেপড)। জায়গাটি ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোনো মাসিক বা বাৎসরিক ফি-ও দেয় না। এর মধ্যে একাধিকবার জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করেনি ফ্রেপড। ঢাবি কর্তৃপক্ষও প্রশাসনিকভাবে শক্ত কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় জায়গাটি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আবাসন সংকট প্রকট। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষও নেই। এর মধ্যে অনিয়ম করে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ঢাবির অবকাঠামো মাস্টারপ্ল্যানেও জায়গাটি ফ্রেপডের জন্য রাখা হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
ঢাবি সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে পলাশী মোড় থেকে সামান্য দক্ষিণে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার কাঠা জমিতে গড়ে তোলা হয় শিক্ষা প্রকল্প ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশন (ফ্রেপড)। ১৯৯৪ সালে সেখানে ব্যক্তি মালিকানায় নির্মাণ করা হয় দ্বিতল মুহম্মদ শামসউল হক ভবন। এরপর কেটে গেছে আরও ৩০ বছর। সব মিলিয়ে ৩৬ বছর ধরে ওই চার কাঠা জমি রয়েছে ফ্রেপডের দখলে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে জমিটি ফ্রেপডের কাছঝ থেকে ফেরত নিতে কার্যক্রম শুরু করে। তবে জমি ফেরত দিতে ফ্রেপড নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকে।
সবশেষ জমিটি ফেরত দিতে ফ্রেপডে গত অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ঢাবি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অক্টোবরের পর নভেম্বর পেরিয়ে ডিসেম্বরও শেষ হতে বসেছে, কিন্তু জমিটি ঢাবি কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যায়নি ফ্রেপড। ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে পরিবর্তনের সুযোগে তারা জায়গাটি দখলে রাখার পাঁয়তারা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে দখল হয়ে যাওয়ার সমালোচনা করে ঢাবির মহসিন হলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাবি প্রশাসন আমাদের সিট দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ক্লাসরুমের জায়গা নেই। আবাসিক হলগুলোতে কত শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছে! পড়ার পরিবেশ নেই। সেখানে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে এভাবে জায়গায় ব্যবহার করতে দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টদায়ক।’
শিক্ষার্থীদের স্বার্থের চেয়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কি না— এমন প্রশ্ন তুললেন নাজিমসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
বিষয়টি নিয়ে ফ্রেপডের সভাপতি মসুদ মান্নানের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের। তার কথাতেও জায়গাটি ঢাবি কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
মসুদ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান আমাদের জায়গাটি ফেরত দিতে বলেছিলেন। এখন যেহেতু সরকার পরিবর্তন হয়েছে, দেশের অবস্থাও খারাপ। আমাদের তো টাকা-পয়সা নেই। আমরা তো চট করে চলে যেতে পারব না।’
জানতে চাইলে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, তারা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করে সেটার একটা চিঠি দিতে। অর্থাৎ তারা কী কী কাজ করেছেন সেটা জানাতে বলেছি। তাদের এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি যে তাদের জমিটি দিয়ে দেওয়া হবে।’
ফ্রেপডের কাছ থেকে জমিটি উদ্ধারের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আসলে এ বিষয়ে জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে দেখব।’
সারাবাংলা/এআইএন/টিআর