Tuesday 24 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অস্থায়ী নিয়োগ দেন ইচ্ছামতো, কারও ধার ধারেন না ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

আরফাতুল ইসলাম নাইম, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৫ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:৪০

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে একের পর এক অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা (ঢাবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হকের বিরুদ্ধে। এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপউপাচার্য কার্যালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হলেও সে অনুমোদন নেননি তিনি। এর মধ্যে গত মাসেই কাজ শুরু করেছেন অন্তত আটজন, যাদের নিয়োগপত্রই নেই।

বাহালুল হকের বিরুদ্ধে এর আগেও নিয়োগে অনিয়ম, কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আগের প্রশাসন। ঢাবির বর্তমান প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে সেই প্রভাব তিনি এখনো খাটিয়ে চলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাবির প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের শুরু থেকে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন দফতরে কাজ শুরু করেছেন আটজন। তারা কোনো ধরনের নিয়োগপত্র না পেয়েই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই আটজনের মধ্যে কয়েকজন আবার ঢাবির বিভিন্ন দফতরে কর্মরতদের আত্মীয়।

এই আটজন হলেন— সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মনির হোসনের স্ত্রী তানজিলা আক্তার তানিয়া, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন অফিসে কর্মরত রবিউল করিমের ছেলে রেজাউল করিম, মুহসীন হলের কর্মকর্তা রফিকের মেয়ে খাদিজাতুল মুন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেনের ছেলের বউ কাজী আসিয়া খাতুন এবং শারমিন আক্তার, সাদিয়া ইসলাম তাপসি, সজল মিয়া ও রমিজ উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী, কোনো পদে কাউকে নিয়োগ দিতে হলে এর জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। এরপর আগ্রহী প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু এসব প্রক্রিয়ার ধার ধারেন না বাহালুল হক। অস্থায়ী বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন ইচ্ছামতো। এর জন্য উপউপাচার্য (প্রশাসন) দফতরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও সেটিও নেন না তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাহালুল হকের বিরুদ্ধে এর আগেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ৫৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪২ জন স্থায়ী হলেও এখনো ১২ জন স্থায়ী হতে পারেননি। এরই মধ্যে তিনি নতুন করে আটজনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছেন।

এদিকে এর আগে এ রকম নিয়ম বহির্ভূত কাজ করলেও এর জন্য কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হককে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই তার বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তার সূত্র ধরেই তিনি প্রশাসনকে তোয়াক্কা করেন না বলে জানিয়েছেন ঢাবি প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।

নিয়ম না মেনে অস্থায়ী নিয়োগের বিষয়ে জানতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হকের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা। তার মোবাইল নম্বরে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ইমেইল ও ঢাবি জনসংযোগ কার্যালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি এই প্রতিবেদক তার কার্যালয়ে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি এবং কথাও বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) অস্থায়ীভাবে কীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন, আমি জানি না। আমি এটুকু বলতে পারি, সম্প্রতি দুটি সিলেকশন বোর্ড বসেছে। কিন্তু এখনো কাউকে সেখানে নিয়োগের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’

গত মাসে অস্থায়ীভাবে আটজনকে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানালেন ঢাবির উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা। এ ধরনের কোনো নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক সাইমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগগুলো দিয়ে থাকি। কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকে, আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখব।’

সারাবাংলা/এআইএন/টিআর

অস্থায়ী নিয়োগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগে অনিয়ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক

বিজ্ঞাপন

শুভ বড়দিন আজ
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:২৮

আরো

সম্পর্কিত খবর