অনলাইনে প্রতারণা, চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৩
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৮ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৫
ঢাকা: অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চীনা নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির উত্তরখান থানা পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে উত্তরখান ও গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত নগদ ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, চার হাজার ডলার ও বেশ কিছু অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, চারটি মোবাইল সেট ও কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— মো. মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চীনা নাগরিক মি. কুকি (৩৫)।
উত্তরখান থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা জনৈক নাহিদুল ইসলামকে (২৮) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যার’ এর মাধ্যমে অনলাইনে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেয়। তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে পলারস্টেপ সফটওয়্যারে অনলাইনে কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতে তারা নাহিদুল ইসলামকে ৮২০ টাকা কমিশন প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে তারা নাহিদুল ইসলামের নিকট থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় চার লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা নিয়েছেন। এরপরও বাদীকে আর কোনো কমিশন না দিয়ে পুনরায় তিন লাখ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা চাইলে বাদীর সন্দেহ হয়। তখন বাদী ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন অ্যাকাউন্টটি উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ এর নামে। তখন বাদী বিষয়টি উত্তরখান থানায় অবহিত করেন।
ঘটনার সত্যতা যাচাই ও আইনগত সহায়তার জন্য উত্তরখান থানার একটি টিম ২৩ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে ‘আনাস এন্টারপ্রাইজে’র দোকানের মালিক মো. মোর্শেদ আলমকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
পুলিশকে জানায় জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ প্রায় ৩২ লাখ টাকা যোগ হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং অবশিষ্ট টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। থানা পুলিশ তখন মো. মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নেয় এবং তার নিকট থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দ করেন।
মোর্শেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক ২টা ৫০ মিনিটে বাবুর্চি বাড়ির গফুর মুন্সী রোডের একটি বাসা থেকে জামালকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। থানা পুলিশ তার হেফাজত থেকে চার হাজার ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, দুটি মোবাইলফোন এবং ব্যাংকের চেকবইয়ের কিছু পাতা জব্দ করেন।
পরে জামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাসিম এ-গুলশান এর নেতৃত্বে উত্তরখান থানার একটি টিম সোমবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে গুলশান থানা পুলিশের সহায়তায় গুলশান-১ থেকে চাইনিজ নাগরিক মি. কুকিকে গ্রেফতার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে আরও জানা যায়, জনৈক মি. কুকি নামক একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে জামালের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চীনে গিয়ে জামালের পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মি. কুকি জানায় কিছুদিন পরে সে বাংলাদেশে আসবে এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা দিবেন। ১৫-২০ দিন আগে উত্তরা রেস্টুরেন্টে মি. কুকির সাথে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে মি. কুকি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে বলে যে নাম্বারে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে এবং সে কুকির প্রদত্ত নাম্বারে উক্ত টাকা ট্রান্সফার করবে। কুকি জানায় এর বিনিময়ে জামাল কমিশন পাবে। জামাল মি. কুকির প্রস্তাবে রাজী হয়ে মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার মি. কুকিকে প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত মি. কুকি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে নিজে জড়িত থেকে তার সহযোগিদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে স্বীকার করেছে।
ভিকটিম নাহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপির উত্তরখান থানায় গ্রেফতার তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/ এইচআই