সাবেক মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৪ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৫০
যশোর: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ে (দুদক) দুর্নীতির ২টি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিন।
এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৫০ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৫ টাকা অর্জন এবং ২৯ ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একটি এজাহারে বাদী ঢাকা দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম। এই মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটির বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন। সেটিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে।
প্রথম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য পরস্পর যোগসাজসে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রাখা এবং নিজ নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা এবং মোট ৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৯ টাকা উত্তোলন ও সন্দেহজনক লেনদেন করে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে মানিলন্ডারিং করেছেন। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন অনুসন্ধানের সময় তন্দ্রা ভট্টচার্যের নামে কোন স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়নি। তার নামে ব্যবসায়িক পুঁজি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৬ কোটি ১২ লাখ ১৪হাজার ১০১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
তাছাড়া আসামি তন্দ্রা ভট্টচার্য নিজ নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা এবং ৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৯ টাকা উত্তোলন করেছেন। যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন তিনি তার স্বামী স্বপন ভট্টচার্য এর ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে সেটার রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং করেছেন।
দ্বিতীয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়,আসামি স্বপন ভট্টাচার্য অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৪ টাকা জমা করেছেন এবং মোট ৪০ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৪ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন করে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অনুসন্ধানকালে আসামি স্বপন ভট্টাচার্যের ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা মূলোর স্থাবর সম্পদ এবং ব্যবসায়িক পুঁজি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার এবং একাধিক ব্যাংক একাউন্টে মোট ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্যের সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ২০ লাখ ৫হাজার ৩৫০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি বিগত সরকারের আমলে যশোর ৫ আসনের একজন সাংসদ ছিলেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য ২০০৮ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩০৪ টাকা এবং মোট উত্তোলনের পরিমাণ ৪০কোটি ৩১লাখ ৫৬হাজার ৫৯৪ টাকা। এই লেনদেন অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন।
এক্ষেত্রে তিনি অস্বাভাবিক লেনদেন করে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ দুর্নীতি ও ঘুষ সংঘটনের মাধ্যমে এবং সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে এই টাকার স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ প্রেক্ষিতে গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি রুজুর অনুমোদন প্রদান করে দুদক কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/এমপি