বিশ্বে বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষ, সাহায্য কমছে ধনী দেশগুলোর
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১১ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:০৫
২০২৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘ যে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে তাতে ৩০ কোটি ৭০ লাখ অভুক্ত মানুষের মধ্যে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের খাবারই সরবরাহ করা যাবে না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪৬ শতাংশ অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছে তারা। এই নিয়ে পরপর দুই বছর প্রয়োজনীয় অর্থের অর্ধেকও সংগ্রহে ব্যর্থ হলো জাতিসংঘ।
বিশ্বে সিরিয়াসহ অনেক দেশের মানুষই ইতোমধ্যে খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ক্ষুধার সমস্যা জেঁকে বসেছে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে যেখানকার মানুষ প্রায় অভুক্ত অবস্থায় দিন পাড় করছেন।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এই বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
কেন অনুদান কমছে?
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত,চরম আবহাওয়া এবং ভয়ংকর মুদ্রাস্ফীতির ফলে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে দরিদ্র দেশগুলো। যার ফলে জাতিসংঘের তহবিলে যে দেশগুলো অর্থ দেয়, তাও অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ছে।
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের ধনী দেশগুলোও আর্থিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। এছাড়া ঘরোয়া রাজনীতির কারণেও কিছু ধনী দেশ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে।
জাতিসংঘকে যে দেশগুলো প্রচুর পরিমাণে অনুদান দেয় তার মধ্যে জার্মানি অন্যতম। কিন্তু ২০২৩-এর তুলনায় ২০২৪ সালে তারা ৫০ কোটি ডলার কম দিয়েছে। তাদের মন্ত্রিসভার সুপারিশ, ২০২৫ সালে তারা একশ কোটি ডলারের কম অনুদান দিতে পারবে। ফেব্রুয়ারিতে দেশটির নির্বাচনের পর নতুন পার্লামেন্ট এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
২০ জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরে বোঝা যাবে জাতিসংঘের আর্থিক অনুদান নিয়ে কী সিদ্ধান্ত এই নতুন প্রেসিডেন্টের।
বিশ্বে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার ৪৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। জাতিসংঘের তহবিলের ৩৮ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইউরোপীয় কমিশন মিলে জাতিসংঘের তহবিলের ৫৮ শতাংশ অনুদান দেয়। আর চীন, রাশিয়া ও ভারত মিলে অনুদান আসে মাত্র এক শতাংশ।
এদিকে, চীন হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অথচ, ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের মানবিক তহবিলে এক কোটি ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। তারা সাহায্যকারী দেশগুলোর তালিকায় ৩২ নম্বরে আছে।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত আছে ৩৫ নম্বর স্থানে। ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের মানবিক তহবিলে ৬৫ লাখ ডলার দিয়েছে।
২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক প্রধান ছিলেন জ্যান ইগল্যান্ড। তিনি বলেছেন, ‘চীন অলিম্পিকের আয়োজন করতে পারে, ভারত সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে চন্দ্রাভিযান করতে পারে, অথচ, বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য তারা আরেকটু অর্থ দিতে পারে না?’
এছাড়া, অনেক সময় সাহায্য দেরিতে পৌঁছায়, থাকে অনেক রকম বিধিনিষেধ। ফলে যাদের জরুরি প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হয়।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ