স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত নয়, সংস্কারসহ ১৪ দাবি এনডিএফের
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৩ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৬
ঢাকা: বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত না করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করাসহ স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিআইসিসিতে এনডিএফ কর্তৃক আয়োজিত ‘জাতীয় চিকিৎসক সমাবেশে’ এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
এনডিএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনারসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার নিয়ে ন্যাশনাল ডক্টর ফোরাম আয়োজিত জাতীয় চিকিৎসক সমাবেশ ১৪ দফা দাবি ঘোষণা করেছে।
দাবিগুলো হলো —
১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য সংস্কার কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
২. ছাত্র জনতার ২৪ বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের যথাযথ মর্যাদা সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৩. ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম স্বাস্থ্যের সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দক্ষতা ও নৈতিকতার সঙ্গে জনবান্ধব বৈষম্যহীন সহজলভ্য ন্যায়নিষ্ঠ ও আধুনিক স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনায় সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
৪. এই সম্মেলন স্বাস্থ্য বিভাগকে চারটি অধিদফতরে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব করছে;
ক. চিকিৎসা শিক্ষা অধিদফতর: মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, পোষ্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল ইনস্টিটিউট, হোমিও মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ এবং ম্যাটসসমূহ অর্থাৎ চিকিৎসা শিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠান ‘চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ এর অধীনে ন্যস্ত করা।
খ. জনস্বাস্থ্য অধিদফতর: বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতাল, ১০০ শয্যা পর্যন্ত সকল হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ মাঠ পর্যায়ের সকল ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ‘জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের’ অধীন ন্যস্ত করা।
গ. স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতর: মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ইনস্টিটিউটসমূহ, ট্রমা হাসপাতাল এবং ১০০ শয্যার বেশি সকল হাসপাতাল (সদর হাসপাতাল ব্যতীত) ‘স্বাস্থ্য সেবা’ অধিদফতরের অধীন ন্যস্ত করা।
ঘ. পরিবার কল্যাণ অধিদফতর: পরিবার কল্যাণ বিভাগের সকল কার্যক্রম এ অধিদফতরের অধীনে ন্যস্ত থাকবে।
৫. এই সম্মেলন ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বঞ্চিত চিকিৎসকদের ভূতাপেক্ষ বা সুপারনিউমারি পদোন্নতি এবং ভবিষ্যতে নিয়মিত প্রতিবছরের জানুয়ারিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৬. বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকসমূহে বেড ও পরীক্ষা-নীরিক্ষার ফি’কে যৌক্তিক পর্যায়ে এনে জনগণের সহজলভ্য সেবার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে। ঔষধ সহ চিকিৎসা সরঞ্জাম এর মূল্য জনসাধারনের জন্য সহজলভ্য ও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
৭. চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল ও নার্সিং স্টুডেন্টসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকল জনবলের প্রতিবছর বাধ্যতামূলক নৈতিক ও ধর্মীয় মোটিভেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৮. কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে স্পেশালাইজড হাসপাতাল পর্যন্ত কার্যকর বহুমুখী (ঊর্ধ্বমুখী পার্শ্বমুখী ও নিম্নমুখী) রেফারেল ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানাচ্ছে।
৯. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল ও পূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহনকারী নির্বিশেষে সকলের নিরাপত্তার জন্য ‘স্বাস্থ্য পুলিশিং ব্যবস্থা’ ও ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ অবিলম্বে জারি করার দাবি জানাচ্ছে।
১০. রেসিডেন্সি ও এফসিপিএস ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা নবম গ্রেড বিসিএস কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ করার দাবি জানাচ্ছে।
১১. বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত করা যাবে না, তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছে।
১২. বিএমডিসিকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে পূরণকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ করে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত স্থায়ী কার্যালয় ও অর্গানোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানাচ্ছে।
১৩. বেসরকারি চিকিৎসকদের বেতন ও ভাতাসমূহ যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করা, স্পেশাল বিসিএস এর মাধ্যমে সরকারি পদ সমূহে চিকিৎসকদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং পোস্ট গ্রাজুযেশনে প্রত্যেকটি সাবজেক্টে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছে।
১৪. গ্রেট ওয়ান ও গ্রেড টু সহ সকল ক্ষেত্রে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা যে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, সেটি গড়তে চিকিৎসকদের বড় বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। আর চিকিৎসকদের একার পক্ষে মানবিক দেশ গড়া সম্ভব নয়, তবে তাদের পথ দেখাতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এনডিএফ এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এমপি