Wednesday 25 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় দৃষ্টিহীনরা বৈষম্যের শিকার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৫ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৫৭

টকিং কম্পিউটার ও ব্রেইল ডিসপ্লে ব্যবহার করছেন দৃষ্টিহীন এক শিক্ষার্থী। ছবি: অনলাইন

বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশীর্বাদ হয়ে এলেও অন্ধ ও আংশিকভাবে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এর সুবিধা থেকে একেবারেই বঞ্চিত। এর মাধ্যমে এসব ব্যক্তি নতুন ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, দৃষ্টিহীনদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রয়্যাল সোসাইটি ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেনের নতুন প্রেসিডেন্ট টম পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এমন অভিযোগ তুলেছেন। তার আহ্বান, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভিডিও গেম থেকে শুরু করে সব ধরনের এআই টুলসকে পূর্ণ বা আংশিক দৃষ্টিহীনদের বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

টম পে বলেন, দৃষ্টিহীন শিশুরা এমনিতেই স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়া। এখন তাদের সীমাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। কারণ তাদের মতো দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা যেসব শিশুর নেই, তারা বিভিন্ন ধরনের গেম খেলতে পারছে, ভার্চুয়াল জগতের বিভিন্ন সুবিধা উপভোগ করতে পারছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চালিত বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছে।

টিম পে’র এসব অভিযোগ অমূলক নয়। বিশেষজ্ঞরাও তার এমন অভিযোগের সঙ্গে একমত। কারণ তারাও বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যেসব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে, তা অনেক বেশি দৃষ্টিশক্তির ওপর নির্ভরশীল। মেটার বিভিন্ন ধরনের চশমা বা গুগল লেন্সের মতো প্রযুক্তিগুলো সরকারি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বস্তুর দিকে তাকানোর মাধ্যমে কাজ করে থকে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্লাইন্ড পিপলের সাম্প্রতিক এক গবেষণাতেও উঠে এসেছে, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ কমছে। এসব মানুষের সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সংযোগ কমছে। অন্য মানুষদের তুলনায় এসব মানুষদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণও অনেক কম।

বিজ্ঞাপন

পে নিজে শৈশবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। পরে তিনি দৃষ্টিহীনদের জন্য ওয়েম্যাপ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন, যেটি কি না কোনো স্থানে যাওয়ার যাওয়ার জন্য নির্দেশনা অডিওর মাধ্যমে দিয়ে থাকে। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি এমন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন, যা দৃষ্টিহীনদের চাহিদা পূরণে সহায়ক হয় এবং পাশাপাশি যার মাধ্যমে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও এমন সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয় যেন তারা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে।

টম পে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হার্ডওয়্যারগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখব, এতে প্রচুর ছবির ব্যবহার রয়েছে। শুধু দৃষ্টিহীন নয়, যাদের বিভিন্ন ধরনের ছবি বুঝতে সমস্যা হয়, এসব প্রযুক্তি বা ডিভাইসে তাদেরও উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাদের মতো যারা আছি, তাদের এসব প্রযুক্তি থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অবশ্য এসব অভিযোগ পুরোপুরি স্বীকার করছে না। গুগল, মেটা (ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি) ও ওপেন এআই (চ্যাটজিপিটির নির্মাতা) বলছে, তারাও পুরোপুরি ও আংশিক দৃষ্টিহীনদের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

গত সেপ্টেম্বরে মেটা এমন একটি প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে, যেখানে কোনো ব্যক্তি তাদের প্রযুক্তি সম্বলিত রে-ব্যানের চশমা পরলে দূরে অবস্থানরত অন্য একজন ব্যক্তি এর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন। তিনি ওই চশমার সাহায্যে এর সামনে থাকা সবকিছু দেখতে পাবেন এবং রিয়েল টাইমে এর বর্ণনা চশমা পরিহিত ব্যক্তিকে জানাতে পারবেন।

ওপেন এআই সম্প্রতি ভার্চুয়াল এক স্বেচ্ছাসেবীর সেবা উন্মুক্ত করেছে, যা ফোনের ক্যামেরার সামনে থাকা যেকোনো কিছুর বর্ণনা পাঠ করতে সক্ষম। ফ্রিজের পাল্লা খুলে ফোনের ক্যামেরাটি যদি এর সামনে ধরা হয়, তাহলে ওই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফ্রিজে কী কী আছে তা বলে দিতে পারবে। গুগলেরও ‘লুকআউট’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত একটি অ্যাপ রয়েছে, যেটি যেকোনো ছবির বর্ণনা অডিও আকারে শোনাতে পারে এবং তার সঙ্গে কথোপকথনও করা যায়।

টম পে বলছেন, এসব প্রযুক্তি থাকলেও দৃষ্টিসম্পন্নদের সঙ্গে দৃষ্টিহীনদের অভিজ্ঞতার পার্থক্য দিন দিন বাড়ছেই। ফলে এআই নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের এখনই উচিত দৃষ্টিহীনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করা।

সারাবাংলা/টিআর

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দৃষ্টিহীন দৃষ্টিহীনদের জন্য প্রযুক্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর