Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাক-চামড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রদান ও পুনর্বাসনে জার্মান অনুদানে প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৩ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৬

ঢাকা : দেশের পোশাক ও চামড়া খাতের শ্রমিকদের উন্নয়নে জার্মান সরকারের অনুদানে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ‘সোশ্যাল প্রটেকশন ফর দ্যা ওয়ার্কারস ইন দ্যা টেক্সটাইল অ্যান্ড লেদার সেক্টর (এসওএসআই)’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হচ্ছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং এটি বাস্তবায়ন করবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অনুদান দেবে জার্মান দাতাসংস্থা জার্মান সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জিআইজেড)।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় দেশের পোশাক ও চামড়া খাতের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা প্রদান, সামাজিক বীমা চালু ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পোশাক ও চামড়া খাতের শ্রমিকদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি এ্যাসক্যাম (ইআইএস) সুবিধা চালু হবে। এর ফলে আনুষ্ঠানিক ভাবে সামাজিক বীমা চালু এবং এর মাধ্যমে এ দুই খাতের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা সহজ হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অথবা অন্য কোন চাপের কারণে কোন এলাকায় সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি থেকেও শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।

প্রস্তাবে বলা হয়, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় শ্রমিকরা যাতে সারা জীবন দারিদ্র্মুক্ত ও দুঘর্টনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন- সেজন্য বিভিন্ন পলিসি এবং কার্যক্রম নেওয়া হবে। সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে তারা তাদের সন্তান ও পরিবারের জন্য বিভিন্ন সুবিধা যেমন- মাতৃত্বকালীন সুবিধা, বেকারত্ব, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বৃদ্ধ বয়সে পঙ্গুত্ব ইত্যাদি সব স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বিভিন্ন সুবিধা লাভ করবে।

পাশাপাশি বেকারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও ন্যূনতম মজুরি আইন ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রণীত ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএসএস) এ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এনএসএসএস’র বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ৩১৫ জন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরামর্শক সেবা, ৫টি অনুদান চুক্তি, ৮৭টি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার, ৬টি সফটওয়্যার ক্রয়, ৩৫টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক ক্রয়, ৩৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার, ১৮টি অফিস সরঞ্জামাদি, ৫৬টি আসবাবপত্র ও ৫০ জন পুনর্বাসন সহায়তা পাবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি কমিশনে প্রকল্পটির বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রকল্পের নামকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রকল্পের বিষয়বস্তুর সঙ্গে নামকরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। কার্যক্রম বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের শিরোনাম থেকে ‘সোশ্যাল’ শব্দটি বাদ দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টরের নাম আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের পরিবর্তে শিল্প ও শক্তি বিভাগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১০৫ জন দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক প্রফেশনালের জন্য ১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা (মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ) ও ২১০ জন দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় প্রফেশনালের জন্য ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়েছে। এই অঙ্গ দুটির ব্যয় কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এসপিইসি সভায় আরো বলা হয়, প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে নীড বেইজড জাতীয় পরামর্শকের জন্য ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। অথচ এ পরামর্শকের তালিকায় ২ জন আন্তর্জাতিক পরামর্শক রাখা হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। ট্রেনিং অঙ্গে ১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে এর মধ্যে কোন খাতের (পোশাক বা চামড়া) কতজন শ্রমিকদের কী কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে-  সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

এছাড়া পোশাক ও চামড়া খাতে ৫০ জন শ্রমিক পুনবার্সনের জন্য মাত্র ২৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে- যা অপ্রতুল মনে হয়। উভয় খাতে পুনর্বাসন ১০০ করা যেতে পাওে বলে এসপিইসি সভায় মত দেয়া হয়। শ্রমিক সংখ্যা ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য মাথাপিছু ব্যয় মানসম্মত হওয়া সমীচীন বলে মনে করেন সবাই।

স্টাডি অঙ্গের জন্য ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আবার ৪টি স্টাডির জন্য পৃথকভাবে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকার সংস্থানের যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া ১২টি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ ফি বাবদ এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।

প্রকল্পের টাকায় জার্মাণ উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের অফিস ভাড়া বাবদ এক কোটি ৪২ লাখ টাকার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সে কারণে জিআইজেডের অফিস ভাড়া বাবদ সংস্থান করা অর্থ বাদ দিয়ে শ্রমিকদের পুনর্বাসন খাতে সংস্থান করা যেতে পারে। অফিস যন্ত্রপাতি অঙ্গে ১৪ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এই অঙ্গের আওতায় কী কী ক্রয় করা হবে – সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে বিভিন্ন অঙ্গের সংখ্যা ও পরিমাণে ভুল আছে বলেও সভায় উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর