৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ভবন উদ্বোধন
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৫ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২০
ঢাকা: শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো, শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত ও শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীতে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন বহুতল নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এসব বিদ্যালয় উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিশুরা পরিবেশ থেকে সবকিছু গ্রহণ করে। সুন্দর স্থাপনা মনকে প্রভাবিত করে। এ উদ্দেশ্যে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ চলছে। এখন ঢাকায় দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায়ও পরবর্তী সময়ে দৃষ্টিনন্দন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে।’
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘শিশুরা শুধু বই পড়ে শিখে, তা নয়। তারা স্কুলে অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশে। স্কুলের সামগ্রিক কার্যক্রম দেখে শিখে। সবচেয়ে বেশি শেখে অভিভাবকদের থেকে। কারণ, শিশুরা অভিভাবকদের সঙ্গে বেশি সময় থাকে। দৃষ্টিনন্দন স্কুল করার পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক, ট্রেনার ও অভিভাবকদের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। এখন অবকাঠামো অনেক ভালো হচ্ছে। শিশুদের শিক্ষার মান ভালো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক স্কুলের অবকাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। শিশু শিক্ষার মান যে পর্যায়ে চাই, সে পর্যায়ে এখনো পৌঁছুতে পারিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় সমস্যা হলে শিশুরা হাইস্কুলে ভালো করতে পারে না। সবাইকে নিয়ে ভালো করতে হবে। না হলে জনসম্পদে পরিণত করা যাবে না। তাই আমরা প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। একজন শিশু ভালো মতো লিখতে, পড়তে, বলতে পারবে; যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ করতে পারবে- এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ ও প্রকল্প পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।
দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো- মিরপুর এক নম্বর সেকশনের মাজার রোড সংলগ্ন ‘লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন’; মিরপুর সাত নম্বর সেকশনের ‘আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন’; বাড্ডার আলাতুনন্নেসা হাই স্কুল সংলগ্ন ‘ভোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন’; ডেমরার কোনাপাড়া রোডের ‘পাড়াডগার মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন’ এবং গুলশানের মাস্টারবাড়ী বাজার-আটিপাড়া রোড সংলগ্ন ‘মুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন’।
এই পাঁচটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। পাঁচটি ভবনের মধ্যে চারটি ছয় তলা এবং একটি ছয় তলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন। এগুলোতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য ১১৬টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া, ওয়াশ ব্লক রয়েছে ১২২টি। বিদ্যালয়গুলোর নতুন ভবনে ছাত্র-ছাত্রীর মোট ধারণ ক্ষমতা চার হাজার।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ১২টি থানায় ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৪টি নতুন বিদ্যালয়সহ (উত্তরাতে তিনটি ও পূর্বাচলে ১১টি) মোট ৩৫৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামগত উন্নয়নের জন্য ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২০ হতে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজ তরান্বিত করতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি উঠবে।
শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ এবং উত্তরাতে তিনটি ও পূর্বাচলে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। স্কুলগুলোর বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম