মিয়ানমার সীমান্তে আতঙ্ক
গুলি এসে পড়ে উঠানে, গোলাবারুদের শব্দে কাঁপে ঘর
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৪
কক্সবাজার: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধে গোলাবারুদের শব্দে আতঙ্ক কাটছে না। গুলি এসে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের উঠানে। গোলাবারুদের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে ঘরদোর। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী বাংলাদেশি বাসিন্দাদের।
এদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা, চোরাচালান, মাদক পাচার, মাইন বিস্ফোরণ ও জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও থেমে নেই। এসব ঘটনা এড়াতে সীমান্তে নিরাপত্তায় বিজিবির পাশাপাশি কোস্ট গার্ডও কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এতে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, নাফ নদী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত।
স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারের ছোড়া গোলাবারুদে এ দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। পাশাপাশি রয়েছে মাইন বিস্ফোরণ, জলসীমা থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া, অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক পাচারসহ নানা ঘটনা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান এই উত্তেজনায় বরাবরই আতঙ্কিত সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে তারা প্রত্যাশা করছেন নিরাপত্তা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে পরাজিত করে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর। বলা যায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জান্তা সরকার এখন এসব এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
দীর্ঘ দিন ধরে চলমান এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এতদিন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চোরাগুপ্তা হামলা চালাত আরাকান আর্মি। এখন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকারের বাহিনী। কিন্তু টেকনাফসহ এর আশপাশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সেখানকার যুদ্ধের রেশে নিয়মিতই ভুগতে হচ্ছে।
নাফ নদী পাড়ের বাসিদা লিয়াকত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিয়ানমারের অস্থির পরিস্থিতিতে আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। দুই দিন আগেও বাড়ির উঠানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে। তাদের গোলাবারুদের শব্দে বসতঘরও কেঁপে ওঠে।’
টেকনাফের সাবরাংয়ের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের কারণে অনেক দিন হলো আমরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারি না। তারা যখন-তখন জেলেদের তুলে নিয়ে যায়। অত্যাচার করে। অনেক সময় ফেরত দেয় না। আবার অনেকের লাশ পাওয়া যায় নাফ নদীতে। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।’
সীমান্তের আরেক বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে আতঙ্কে আছি। এ অবস্থায় প্রশাসনের কাছে আমাদের আশা, তারা আমাদের জীবনযাপনকে নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেবে।’
সীমান্তে নিরাপত্তায় বিজিবির পাশাপাশি কোস্ট গার্ডও কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোস্ট গার্ডও কাজ করছে। মিয়ারমারে সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলায় সীমান্তের যেসব অংশ ঝুঁকিপূর্ণ, সে সব অংশ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সারাবাংলা/এসআর
কক্সবাজার কোস্টগার্ড গোলাবারুদের শব্দ বিজিবি মিয়ানমার সীমান্তে আতঙ্ক