Thursday 26 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিসা জটিলতা
মালয়েশিয়া থেকে ১৮ বছর পর দেশে ফিরলেন রবিউল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩২

দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফেরা রবিউল করিমকে জড়িয়ে আছেন ছেলে-মেয়েরা

ঢাকা: এক, দুই কিংবা পাঁচ বছর নয়, টানা আঠারো বছর পরিবার থেকে দূরে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরেছেন রবিউল। যেখানে পরিবার তার ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিল। সেই রবিউল ফিরে আসায় পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার। রবিউল দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর)।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাটের রবিউল করিম সংসারের অভাব মেটাতে কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়া পৌঁছে দেখেন, তিনি দালালের প্রতারণার শিকার। এর পর থেকে ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে নানা জটিলতায় ভুগেছেন। এক পর্যায়ে পাসপোর্টই হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফলে বারবার দেশে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ রবিউল আটকে যান প্রবাসেই।

বিজ্ঞাপন

যতই দিন বাড়ে ততই উদ্বেগ বাড়তে থাকে তার পরিবারের। বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বড় ছেলে ডলার মাহমুদ সরকারের নানা দফতরে যোগযোগ করেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় বাবাকে ফিরিয়ে আনতে পারছিলেন না। এভাবে পার হয়ে যায় আঠারটি বছর।

মাস তিনেক আগে ডলার খোঁজ পান ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের। যারা আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করেন। এমন খবরে বাবার প্রত্যাবাসনের সুযোগ আছে কি না সেটা জানতে ছুটে যান আশকোনায়।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মীরা ডলারের কাছ থেকে বিস্তারিত সব তথ্য জানার পর শুরু হয় রবিউল করিমকে দেশে ফিরিয়ে আনার জটিল প্রক্রিয়া। এ কাজে সহযোগিতা নেওয়া হয় মালয়েশিয়া-প্রবাসী সাংবাদিক বাপ্পি কুমার দাসের। রবিউল করিমকে দেশে ফেরানোর জন্যে দূতাবাস, ইমিগ্রেশনসহ সেদেশের নানা দফতরে যোগযোগ করেন তিনি। ব্র্যাকের পক্ষ থেকেও নিয়মিত পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয় তাকে।

বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রবিউল করিম

দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রবিউল করিম

এভাবেই ঘটে নানা জটিলতার অবসান। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশে ফিরেছেন রবিউল করিম। জড়িয়ে ধরেছেন ছেলে-মেয়েদের। আপ্লুত হয়েছেন মেয়ে ডলির কোলে নাতি নাহিদকে জড়িয়ে ধরে।

বাবাকে ১৮ বছর পরে নিজেদের মাঝে ফিরে পেয়ে আপ্লুত ডলার মাহমুদ বলেন, ‘মনে পড়ে না বাবাকে শেষ কবে, কীভাবে জড়িয়ে ধরেছি। একসময় ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা হয়তো আর আমাদের মাঝে ফিরবেন না। কিন্তু আজ ব্র্যাক এবং বাপ্পি দাদার সহযোগিতায় সেই দিনটি এসেছে। আমরা তিন ভাই-বোন, বাবার পাশে বসে আছি, তাকে ছুঁয়ে দেখছি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বাবা রবিউল আলমকে ফিরে পয়েছেন ডলার-ডলি আর হানিফ।’

২০১৭ সাল থেকে এমন ১৩৮টি পরিবারকে পুনর্মিলনে সহায়তা করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার ও মানবপাচার বিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত আল-আমিন নয়ন বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কারণে বাংলাদেশিরা আটকে পড়েন। আমরা বিপদে থাকা এই মানুষদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থেকেই উদ্ধার করার কাজটা শুরু করেছি। এ কাজে নানা ব্যক্তি ও সংগঠন আমাদের পাশে থেকে সহায়তা করছে।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

১৮ বছর টপ নিউজ দেশে ফিরলেন মালয়েশিয়া রবিউল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর