সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করছে : মির্জা ফখরুল
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৯ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৫
ঢাকা: নতুন ভোটার হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ১৭ বছর করার প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কেন যেন মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হচ্ছে, এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে, এটা সঠিক নয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্ট হয়েছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়নে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা নতুন একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। সে প্রস্তাবটা হচ্ছে যে, ১৭ বছর বয়স হবে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য। তার মানে আবার নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। এটা তো আপনার কাজ না। ইউ আর দ্য চিফ এক্সিকিউটিভ। আপনি প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে, ১৭ বছর বয়স হতে হবে। আপনি যখন বলছেন, তখন দ্যাটস ইজ দ্য বাইন্ডিং ফর দ্য ইলেকশন কমিশন। বিষয়টা ইলেকশন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিন। দে উইল ডিসাইড।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন ১৮ বছর আছে। যদি কমাতে চান, তাহলে নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। তা না করে আপনি যদি প্রথমেই বলে দেন, তাতে কিন্তু একটা চাপ পড়ে যায় নির্বাচন কমিশনের ওপর। আমি মনে করি বিষয়টিকে এভাবে না করে তাদের উচিত ছিল- বিষয়টি নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া। আমি এখনও মনে করি, এ বিষয়টি নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলা উচিত। এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে। জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। আরও বিলম্ব হবে।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এরমধ্যে আবার খবর আসছে যে, আরও দুই/তিনটা দল গঠিত হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি আরও দুই/তিনটা দল সম্পৃক্ত হয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। একশ’টা হোক, দুইশ’টা হোক, তাতেও কোনো আপত্তি নাই। তবে সেটা জাতির জন্য কতটা কাজে লাগবে, সেটা সবাই চিন্তা করবেন।’’
‘‘এখন বাংলাদেশে একটা সমস্যা কী জানেন? আমরা সবাই রাজনীতিবিদ। রাজনীতি নিয়ে আালোচনা করতে, চর্চা করতে আমরা সবাই পছন্দ করি। আবার সোশ্যাল মিডিয়া মারাত্মক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে সবাইকে রাজনীতিবিদ হওয়ার, সবাইকে সাংবাদিক হওয়ার, সবাইকে ইউটিউবার হওয়ার। ভালো তো। সবাই পার্টিসিপেট করছে। কিন্তু এসব বিষয় একখানে আনতে হবে তো। বাংলাদেশকে তো একটা দিকে নিয়ে যেতে হবে’’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা কথা পরিষ্কার করে বলছি, শুধু সুন্দর সুন্দর কথা বললে কাজ হবে না। এখনও পর্যন্ত কিন্তু মানুষ কোনো স্বস্তি পায়নি। সংস্কার তো সবাই চায়, কিন্তু সেই সাথে বাজারে কমদামে সবজি চায়, নিরাপত্তা চায়, রাস্তায় বের হয়ে খুন হয়ে যাবে না, এটা চায়। গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে ৬/৭ জন মারা যাবে না, এটা চায়। আমি আশা করব যে, সরকার আরও বেশি গভর্নেন্সের দিকে নজর দেবে।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা সংস্কার চাই। সে সাথে এটাও চাই, দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। আজকে দেখুন, দেশে সংকট বাড়ছে তো বাড়ছেই। সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের। চালের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে চাল কেনাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাল-ডাল-তেল-লবন, ডিম-মাছ-মাংস– সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবন এখন অতিষ্ঠ। এদিকে তাদের কোনো খেয়াল নাই। তাদের মধ্যে কোনো সহানুভুতি কাজ করছে না। কিছু বললেই বলে, ‘এত দ্রুত সম্ভব না।’ আরে আমরা উদ্যোগটা তো দেখতে চাই। কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটা দেখতে চাই।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো দেখলাম না যে, উনাদের বড় বড় যেসব উপদেষ্টা আছেন, তারা বাজারে গিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন- সমস্যাটা কোথায়? অনেকেই তারা আবার রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক উক্তি করেন, কমেন্ট করেন, এমনকী রাজনৈতিক দলগুলোকে পর্যন্ত কটাক্ষ করেন। এটা সঠিক নয়, এটা হওয়া উচিত নয়।’’
‘‘আপনাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আপনারা অন্তর্বর্তী সরকার। আপনাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে, সংস্কার করতে চান, সংস্কার করবেন, সেই সঙ্গে একটা নির্বাচন আয়োজন, যে নির্বাচনটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে- এটাই হচ্ছে প্রধান কাজ। নির্বাচন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো আপনার প্রতিপক্ষ নয়। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের সহযোগিতা করছে। আপনারাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন না’’-বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/আরএস