পাকিস্তানের বিমান হামলার পালটা জবাব দিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনী। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলায় এক পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বা সরকার হামলার তথ্য স্বীকার করেনি।
সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের দ্য ডনের খবরে বলা হয়, শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ঘোজগাড়ি, মাথা সাংগার, কোট রাঘ ও তারি মেংগালসহ কয়েকটি এলাকায় হালকা ও ভারী দুই ধরনের অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই আফগান বাহিনী হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালালে তার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে এএফপির খবরে বলা হয়েছে।
ওই সূত্রের বরাতে ডন বলছে, আফগানদের হামলায় পাকিস্তানি এক প্যারামিলিটারি সেনা নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ করলে আফগানিস্তানের সাত-আটজন সেনা নিহত হয়েছেন বলে ওই সূত্র দাবি করেছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তরেখাকে আফগানরা ‘কাল্পনিক রেখা’ অভিহিত করে থাকে। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই ‘কাল্পনিক রেখা’র ও পারে থাকা যেসব কেন্দ্র ও আশ্রয়স্থল থেকে আফগানিস্তানে হামলা চালানো হয়, সেগুলোই ছিল তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু।
হামলাটি পাকিস্তানকে নির্দেশ করে করে করা হয়েছে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি বলেন, ‘আমরা এটিকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড বলে মনে করি না। তাই আমরা নিশ্চিত করতে পারি না যে এটি পাকিস্তানের এলাকা। তবে এটি কাল্পনিক রেখার ওপারে লক্ষ্যবস্তুতে করা হামলা।’
আফগানিস্তান বহু দশক ধরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে নির্ধারিত ডুরান্ড লাইনকে অস্বীকার করে আসছে। এই লাইনটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার পার্বত্য অঞ্চলে নির্ধারিত হয়েছিল।
পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, আফগান মাটি থেকে তাদের ভূখণ্ডে একাধিক হামলা চালানো হয়েছে। যদিও আফগান তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যারা আফগান তালেবানের আদর্শিক সহযোগী, পাকিস্তানের একটি সেনা অঞ্চলে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই হামলায় পাকিস্তান দাবি করেছে যে তাদের ১৬ জন সেনা নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘আমরা তাদের (আফগানিস্তানের) সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু টিটিপিকে আমাদের নিরীহ মানুষদের হত্যা করা বন্ধ করতে হবে। এটি আমাদের রেড লাইন।’
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের পর পাকিস্তান ভালো সম্পর্কের আশা করলেও টিটিপির ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে এই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানের পূর্ব পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি সামরিক বিমানের বোমা হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী।
আল জাজিরার প্রতিবেদক আবিদ হুসেনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ৯৫০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি নাগরিক এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে।