‘যার যার ধর্ম পালন করুন, সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করবো’
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের হিন্দুদের ভালো করে ধর্ম পালন করার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যার যার ধর্ম ভালো করে পালন করুন। কোনো অসুবিধে নেই। আমরা মুসলমান ভাই আপনাদের পাহারা দিয়ে ধর্ম পালন করার সহযোগিতা করব। কোনো অসুবিধে নেই, ভালো করেই সনাতন ধর্ম পালন করুন, সম্প্রীতি আমরাই রক্ষা করব।’
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডের পিটিআই মিলনায়তনে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান। সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় জম্মভূমি বাংলাদেশ। আমরা এখানে যারা রয়েছি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান। এরকম একটি সম্প্রীতির দেশ আর কোথাও পাবেন না। সাম্প্রদায়িক ও উষ্কানিমূলক বক্তব্যগুলো যেভাবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দেওয়া হয়েছে, আমি পার্শ্ববর্তী দেশকে বার্তা দিতে চাই আপনাদের দেশ নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন। বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করার সময় আপনাদের আর হবে না।’
‘আপনারা যেটা চেয়েছিলেন, এখানে একটি হিন্দু,মুসলিম দাঙ্গা হবে আর আপনাদের বন্ধু ফ্যাসিস্ট সংগঠন আওয়ামী লীগকে আবার ঢুকিয়ে দেবেন। কিয়ামতের ফজর হবে, কিন্তু আপনাদের সে স্বপ্ন বাংলাদেশে আর বাস্তবায়িত হবে না। কারণ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই যে উপদেষ্টামণ্ডলি, এটা নির্বাচিত না। আমরা সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে উপদেষ্টামণ্ডলীকে দায়িত্ব দিলাম, ওরা বললো আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করলাম, আমরা আপনাদের জন্য দায়িত্ব পালন করব। সুন্দর ঘোষণা দিয়েছে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার করে জনপ্রতিনিধিদের হাতে নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। এখানে তো কোনো জটিলতা নেই।’
গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে হিন্দুদের সমাবেশ আওয়ামী লীগের ছিল দাবি করে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘আপনারা যেভাবে প্রেসক্লাবে ও চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশ করলেন, লালদিঘী্র পাড়ে সমাবেশ করে বাংলাদেশের পতাকার ওপর আরেকটি পতাকা তুলে দিলেন। আপনারা কি পেয়েছেন। আপনারা তো আসলে সনাতনী ধর্মের জন্য সমাবেশ করেননি। আপনারা আওয়ামী লীগের জনসমাবেশ করে তাদের আনার জন্য এসব করেছেন।’
‘আমরা কি সেটা বুঝতে পারিনি। আমরা আগে বেকুব ছিলাম। এখন একটু চালাক হয়েছি। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান কোনো ভেদাভেদ তো নেই। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু এ শব্দ বাংলাদেশে আর থাকবে না। আমরা সবাই স্বাধীন, স্বার্বভৌম প্রিয় বাংলাদেশের নাগরিক।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ। এ দেশে আমাদের থাকতে ও মরতে হবে। কাজেই এ দেশকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। যতবেশি আমরা এ দেশকে ভালোবাসতে পারব, ততবেশি আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন বাড়তে থাকবে। আর যত কম ভালোবাসব ততই সম্প্রীতির বন্ধন থাকবে না। এটাই বাস্তবতা। কাজেই এ দেশকে আমাদের ভালোবাসতে হবে।’
‘যেভাবে ১৯৭১ সালে, ৯০’র স্বৈরাচারের গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আমাদের ভাইয়েরা দেশকে ভালোবেসেছিল ঠিক একইভাবে সম্প্রীতির বন্ধন রক্ষা করতে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যত ধর্মের, বর্ণের মানুষ হই না কেন, আমাদের একটাই পরিচয় থাকা উচিত। আমরা সবাই বাংলাদেশি। এ মনোভাব যখন থাকবে তখন আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন ছাড়া অন্য কোনো প্রশ্ন আসবে না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্প্রীতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মুনির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, পি কে বড়ুয়া ও ব্রিজেড ডাইচ।
সারাবাংলা/আইসি/এসআর
চট্টগ্রাম জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী মহানগর জামায়াত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সম্প্রীতি