Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রয়ণ প্রকল্প
৫ বছরে ১ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়ালও নির্মাণ হয়নি, প্রকল্প সংশোধনে বিধি লঙ্ঘন

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৫ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৫

ঢাকা :  চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরে ১ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়ালও নির্মিত হয়নি। অন্যদিকে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ উপখাতের পুরো অর্থ ব্যয় করা হলেও কাজের অগ্রগতি আংশিক।

এ ছাড়া কাজের পরিধি বাড়ায় প্রকল্পের কোনো অঙ্গের ব্যয় বাড়লেও অঙ্গ সংখ্যা হ্রাসে ব্যয় কমছে না। এ ধরনের নানা অসঙ্গতি নিয়ে অতি সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে, যা বিধিবহির্ভূত বা প্রকল্প সংশোধন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘গুরুতর অনিয়ম’ বলে মনে করছেন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা,বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিস্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এর বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা (ভূমি অধিগ্রহণ, জীপ গাড়ি-মোটর সাইকেল-স্পীডবোট ক্রয় ছাড়া) এবং বাস্তবায়নকাল ছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চুক্তির মেয়াদকাল তিন বছর কিংবা ডিপিপি ও  আরডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু মহামারি কোভিড ১৯ এর কারণে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের ভৌত কাজ বাস্তবায়ন দেরি হয়ে যায়। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদকাল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের অধীনে রিটেইনিং ওয়াল, ফ্লাড ওয়াল, রেগুলেটর নির্মাণ ও নদী তীর সংরক্ষণ এ চার ধরনের ভৌত কাজ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত ৬ বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অসঙ্গতির বিষয়ে সূত্র জানায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠিত কারিগরি কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) কর্ণফুলী নদীর ডান তীর বরাবর ২ দশমিক ১৯০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, রাস্তা উঁচুকরণ ও একটি ব্রীজ সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইতোমধ্যে এ খাতে ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ১১০ কোটি টাকার মধ্যে ১০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা অর্থাৎ মূল অনুমোদিত প্রাক্কলনের প্রায় ১০০ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫১০ কিলোমিটার। এর পরেও এ খাতে ব্যয় বাড়িরেয় ২৭৮ কোটি ৬৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।  যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের প্রায় ২৫৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।
সূত্র জানায়, এছাড়া মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজ ১৮ দশমিক ৯৬৫ কিলোমিটারের জন্য ৮১০ কোটি ২৬ লাখ টাকার সংস্থান ছিল। প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদে মাত্র শূন্য দশমিক ৬০০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের জন্য এর মধ্যেই ১৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই অঙ্গের কাজের পরিমাণ কম করে  ৬ দশমিক ৮৮৫ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের জন্য ৪২৭কোটি ৭০ লাখ টাকা (প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় ৬২ কোটি ১২ লাখ টাকা) ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খাতে ইউনিট প্রতি ব্যয় ১৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠকে প্রকল্পের এই পর্যায়ে এসে একটি চলমান কাজের বিপরীতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বলে সূত্র জানায়।

অন্যান্যের মধ্যে মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি রেগুলেটরে ১০ কিউসেফ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬৯টি পাম্প স্থাপনের সংস্থান আছে। সংশোধনী প্রস্তাবে একই ক্ষমতা সম্পন্ন ৫৭টি পাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খাতে পাম্পের সংখ্যা কমলেও ব্যয় কমানো হয়নি। এ অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য কারিগরি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া জেনাটরের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৭টির পরিবর্তে ১৫টি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অঙ্গের ব্যয় ৭ কোটি টাকার স্থলে ১৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র বলছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ,অনুমোদন ও সংশোধন অনুসারে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কোন ক্রয় কার্যক্রমে কোন প্যাকেজ বা লটের দরপত্রে উদ্ধৃত মূল্য এই প্রকল্পে সংশিষ্ট প্যাকেজ লটের অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় অতিক্রম করলে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করার আগে আবশ্যিকভাবে প্রকল্পের সংশোধন কিংবা আন্ত:অঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবের বৈধতার বিষয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত তিন মাস আগে সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এর পরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তা অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে না বলে বিধান আছে। কিন্তু এ প্রকল্পে সেই বিধান মানা হয়নি। প্রকল্পটি বর্ধিত মেয়াদে গত ৩০ জুন সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। এমতাবস্থায়, বৈঠকে প্রকল্পটির সংশোধন প্রক্রিয়াকরণের বিলম্বের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে পরিকল্পনা কমিশন যেসব বিষয় তুলে ধরেছে, এতে শুধু অনিয়ম বললে ভুল হবে। এখানে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। এটি নিয়ে এসপিইসি সভা করাই উচিত হয়নি পরিকল্পনা কমিশনের। এসব ক্ষেত্রে কঠোর হতে না পারলে ভবিষ্যতে এরকম প্রস্তাব আসতেই থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন যদি বিষয়টি নিয়ে কঠোর না হয় তাহলে অনিয়মের বৈধতা দেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

চট্টগ্রাম মহানগরী জলাবদ্ধতা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর