বিকেলে সমাবেশ শহিদ মিনারে, ঘোষণাপত্র পাঠ অনিশ্চিত
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:৫২ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১২
ঢাকা: পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি বহাল রয়েছে। তবে কর্মসূচিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ তথা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ বা পাঠ করা হবে কি না, সে বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর রাত পৌনে ১টার দিকে সংগঠনের মুখ্য সংগঠন হান্নান মাসউদ সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
হান্নান মাসউদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রেস সেক্রেটারি (সোমবার) রাত ১০টার দিকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর)। সরকারের ঘোষণপত্রের খবরের পর ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের অনুষ্ঠানটি আর হচ্ছে না। এ জন্য আমরা সমন্বয়করা মধ্যরাতে জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই মুখ্য সংগঠক বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহিদ মিনারে আমাদের পূর্বঘোষিত অনুষ্ঠান হবে। তবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে কি না, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।
সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করলে তাতে পূর্ণ সমর্থন থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। তবে শহিদ মিনারের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান হান্নান মাসউদ। ৫ আগস্ট যেভাবে জনসাধারণ রাজপথে নেমে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তীব্র অনাস্থা জানিয়েছিল, মঙ্গলবারের শহিদ মিনারের কর্মসূচিতেও একইভাবে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, রাজপথে নেমে এসে সবাই যেন জুলাই প্রোক্লেমেশনের পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন।
জুলাই প্রক্লেমেশন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা পূর্ববর্তী কর্মসূচি অনুযায়ী শহিদ মিনারে একত্রিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে ষোঘণাপত্র আসবে। তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না। ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে, সেই ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার বলেছে, সবার পক্ষ থেকে তারা ঘোষণাপত্র দেবে। কিন্তু আমরা আগামীকাল প্রক্লেমেশনের পক্ষে সারা দেশের মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই।
শহিদ মিনারের অনুষ্ঠানে জুলাই প্রক্লেমেশন প্রকাশ বা পাঠ করা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান মাসউদ বলেন, প্রক্লেমেশন কীভাবে বা কী হবে, কালকে (মঙ্গলবার) আমরা সেখানে বলে দেবো।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘জুলাই প্রক্লেমেশন’ বা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। পরে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বাংলামোটরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মতো অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলা হবে। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কবর রচনা করা হবে।’
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা ছিল বিপুল গণমানুষের সমাবেশে। ওই দিন সন্ধ্যায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
সরকারে এ অবস্থান অবশ্য পরিবর্তন হতে সময় লাগেনি। সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবই আবার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।’ সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জুলাই প্রক্লেমেশন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন