Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা-নির্যাতনে বছর জুড়ে ৮২০ শ্রমিকের প্রাণহানি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৩৯ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:২৫

ঢাকা: ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পরিবহণ খাতে। আর কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১৩ জন শ্রমিক।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

১৩ টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে দুর্ঘটনা ও নির্যাতনের তথ্য পর্যালোচনা করে একটি জরিপ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। আর ডিসেম্বরের বাকি ১৫ দিনের তথ্য নতুন বছরের প্রথম মাসেই প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।

জরিপের তথ্যমতে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ৭০৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ২৭৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহণ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০২ জন কৃষি খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯১ জন নির্মাণ শ্রমিক। এ ছাড়া রিকশা শ্রমিক ৪৩, প্রবাসী শ্রমিক ৩৮, দিনমজুর ৩২, বিদ্যুৎ খাতে ২২, মৎস্য শ্রমিক ১৯, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প শ্রমিক ৯, স্টিলমিলে ৯, নৌ পরিবহণ খাতে ৮, অক্সিজেন ফ্যাক্টরিতে ৭, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ৬, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ৫, রাইস মিলে ৫, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে ৫, দোকানে ৫ জন কর্মচারী এবং অন্যান্য খাতে ২৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

বিলসের তথ্যমতে, এ বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২৯২ জন শ্রমিক আহত হন। এর সবাই পুরুষ শ্রমিক। সর্বোচ্চ ৪৭ জন মৎস্য শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবহণ শ্রমিক ৪১ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণ শ্রমিক ২৭ জন। এ ছাড়া অক্সিজেন কারখানায় ২৪, নৌ পরিবহণ খাতে ২৩, দিনমজুর ২০, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ১৮, তৈরি পোশাক শিল্পে ১৬, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ১৩, পেপার মিলে ১১, দোকানে কর্মচারী ১০, কৃষিতে ৯, ভোজ্যতেল ফ্যাক্টরিতে ৬, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ৬, বিদ্যুৎ খাতে ৫ জন এবং অন্যান্য খাতে ১৬ জন শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়া ৫৫ জন শ্রমিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ হন, যার মধ্যে অধিকাংশই মৎস্য শ্রমিক।

বিজ্ঞাপন

জরিপে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা, দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বজ্রপাত, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, বিস্ফোরণ, সমুদ্রে ঘূর্নিঝড়ে, নৌকা/ট্রলার ডুবি, বন্যপশুর আক্রমণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭৪২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় ও আহত হন ৪৮৯ জন শ্রমিক। নিহতদের মধ্যে ৭৩৯ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী শ্রমিক ছিলেন।

কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে বিলস জানায়, চলতি বছরে ২২৯ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ১১৩ জন নিহত, ১০০ জন আহত, ১৫ জন নিখোঁজ এবং এক জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়।

নির্যাতিতদের মধ্যে ১৯৩ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন ৪৪ জন অটোরিকশা শ্রমিক, যার মধ্যে ৪৩ জন নিহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। এ খাতে ৫ জন নিহত, ২৯ জন আহত ও একজন আত্মহত্যা করেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ জন পরিবহণ খাতে। এখানে ২০ জন নিহত, ৪ জন আহত ও একজন নিখোঁজ হন।

এ ছাড়া ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে ১২ জন নিহত, ৮ জন আহত হয়েছেন। ১৯ জন কৃষি খাতে নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ৫ জন নিহত ও ১৪ জন অপহৃত হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, অপহৃতদের মধ্যে পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

২ জন নিহতসহ ১৭ জন সংবাদকর্মী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে আহত হয়েছিলেন ১৫ জন। এ ছাড়া ১৪ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ৭ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ ও মারধরের মতো ঘটনা রয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/ এইচআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর