আতশবাজি-পটকা ফুটিয়েই ২০২৫ সাল বরণ, কাজে আসেনি বিধিনিষেধ
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:০৯ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:১৬
ঢাকা: ঘড়ির কাঁটা ঠিক রাত ১২টা স্পর্শ করতেই মুহুর্মুহু শব্দ, মধ্যরাতের আকাশ উদ্ভাসিত আলোয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কয়েক দিনের প্রচার, আহ্বান, বিধিনিষেধ আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের হুমকির কোনোটাই কাজে আসেনি। আতশবাজি আর পটকা ফুটিয়েই নতুন খ্রিষ্টীয় বছর ২০২৫ সালকে বরণ করে নিয়েছে মানুষ।
কেবল রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই মাঝরাত আলোকিত হয়েছে আতশবাজির আলোয়। মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে দিকে দিকে ফুটেছে পটকা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টায় আলো আর শব্দের যুগলবন্দি জানিয়ে দিলো, ২০২৪ সালের পাতা উলটে শুরু হয়েছে ১ জানুয়ারি, যাত্রা শুরু করেছে ২০২৫ সাল।
রাত ১২টা বাজতেই মেসেজিং অ্যাপগুলোতেও নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার মেসেজের টুংটাং শব্দ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার শুভেচ্ছাবার্তায় সয়লাব। দূর দূরান্তে থাকা স্বজনরা তখন একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে। দূরে থেকেও যেন একসঙ্গেই উদ্যাপন করলেন নববর্ষকে।
গত কয়েক বছর ধরেই নববর্ষ বরণ করে নিতে মধ্যরাতে আতশবাজি-পটকা ফোটানোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এবার পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে এসব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। শেষ এক বিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি হুমকিই দেওয় হয়, আতশবাজি-পটকা যারা ফোটাবেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হবে।
বছরকে বিদায় জানানো ও নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার রাতে ঢাকায় যেকোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফাটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি)। অনুমতি ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যালি ও শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি এগুলোর কোনোটিই। বরং বুধবার রাত ৮টার পর থেকেই নগরীর অলিগলিতে উৎসবের আবহ দেখা যায়। রাত ১০টার পর থেকে অনেকে অবস্থান নিয়েছেন গলিতে, অনেকে ছাদে। শুরু হয় গানবাজনা। ক্রমেই সড়কে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি।
রাত ১২টা নাগাদ রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর-১২, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকায় সড়কে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে নিজ নিজ এলাকা থেকে জানিয়েছেন সারাবাংলার প্রতিবেদকরা। তারা জানান, ছাদে ছাদেও তখন মানুষজনের ভিড়। সঙ্গে ছিল আতশবাজি আর পটকা ফোটানোর উৎসব। রাত ১টা পেরিয়ে গেলেও যেন এসব এলাকায় মানুষজনের উৎসব ফুরোয়নি।
সারাবাংলার ঢাবি করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, যান চলাচলে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা গত বছরের মতোই বেশ নীরব ছিল। টিএসসিসহ আশপাশের সড়কগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিক্ষার্থীকে দেখা গেলেও বর্ষবরণ উদ্যাপনের আয়োজন ছিল না। তবে হলে হলে শিক্ষার্থীদের জমায়েত দেখা গেছে। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের পটকা ফোটাতেও দেখা গেছে। রাত ১টার দিকেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থেকে থেকে শোনা গেছে পটকার শব্দ।
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, জেল শহরগুলোতেও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সবাই আতশবাজি আর পটকাকেই বেছে নিয়েছে। বাসাবাড়ির ছাদসহ মহল্লায় মহল্লায় সড়কে ছিল জনসাধারণের উপস্থিতি। বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের ভিড় ছিল একটু বেশিই।
রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্য কোনো জেলা থেকে বর্ষবরণের উদযাপনের কারণে কোনো দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আতশবাজি-পটকা ফোটানোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানানো হলেও সেসব আদালতে কাউকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়েছে কি না, সে তথ্যও জানা যায়নি।
সারাবাংলা/টিআর