মাস ও বছরের রেকর্ড ভাঙল রেমিট্যান্স
১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫০
দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড গড়েছে বিদায়ী বছরের শেষ মাস তথা ডিসেম্বর। ইনফোগ্রাফ: সারাবাংলা
ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রবাসীরা ২৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার (২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে এত বড় অংকের রেমিট্যান্স কোনো বছরে আসেনি। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে প্রবাসী আয় তার আগের বছরের (২০২৩ সালের ) চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বা ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার। অন্যদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ২৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স এর আগে কখনো আসেনি।
সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ওটাই ছিল এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুনে দেশে রেমিট্যান্স আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫৪ কোটি ডলার। চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে গত বছরের সেপ্টম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার। ঠিক পরের মাস অক্টোবরেই ২৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের তালিকায় রয়েছে পঞ্চম স্থানে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। আইএমএফ’র কাছ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে আমাদের কত শর্ত পূরণ করতে হয়। অথচ আমাদের প্রবাসীরা ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় সুফল বয়ে আনবে।’
১২ মাসের রেমিট্যান্স
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ২১১ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ডলার, মার্চে ১৯৮ কোটি, এপ্রিলে ২০৪ কোটি, মে’তে ২২৫ কোটি, জুনে ২৫৩ কোটি। এ ছাড়া জুলাইয়ে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৪০ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে এসেছে ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
বিভিন্ন অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৩৯১ কোটি বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স
২০২৪ সালে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান।
অন্যদিকে ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম
