সংকটে পোশাক শিল্প, দ্রুত বিজিএমইএ নির্বাচনের দাবি
১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৬ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫০
ঢাকা: দেশের তৈরি পোশাক খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পোশাকের উৎপাদন ও পরিবহণে বিঘ্ন ঘটেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও নির্বাচন আয়োজনের বাইরে তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই দ্রুত বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচনের দাবি করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস.এম. নুরুল হকের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান দুরবস্থার নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে বিজিএমইএ’র সম্মেলন কক্ষে ২০০ জন সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতির মাধ্যমে এক মতবিনিময় সভায় পোশাক উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশের সরকার পতন হয়। স্বৈরশাসকের বিদায়ের পর দেশে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়। যার প্রভাব পোশাক শিল্পেও পড়ে। ফলশ্রুতিতে এ শিল্প খাতে উৎপাদন ও বিপণনে বিঘ্ন ঘটে। পরিচালনা পর্ষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতায় অবস্থা অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু হঠাৎ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠীর প্ররোচনায় স্বীয় স্বার্থ হাসিলে কোনো কারণ ছাড়াই একটি নির্বাচিত প্রতিনিধি পর্ষদকে বাদ দিয়ে গত ২১ অক্টোবর বিজিএমইএ’র নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করা হয়। পরে সরকার বিজিএমইএ-তে একজন পাবলিক সার্ভেন্টকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে; যা আমাদের ৩৫ বছরের গৌরবোজ্জল ইতিাহসে কখনও ঘটেনি।
সভায় বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘কিছু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল বিজিএমইএ নির্বাচিত বোর্ড বাতিল করে সরকারকে চাপে ফেলে তদবির করে প্রশাসক এর নামে একজন পাবলিক সার্ভেন্টকে নিয়োগ দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই উচিত হয়নি। ওই প্রশাসক প্রথম সভাতেই সেই স্বার্থান্বেষী মহলের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ পাতার একটা সংস্কার প্রস্তাব নিয়েছে। পরবর্তী তদবিরে সেই নীল নক্শা অনুযায়ী যাবতীয় কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে কি সরকার সংস্কারক (কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য) করে পাঠিয়েছে, নাকি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত কমিটির কাছে হস্তান্তর করার জন্য। এর বাইরে তার ক্ষমতা বা দায়িত্ব হচ্ছে বিজিএমইএ এর সাধারণ দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করা। কিন্তু বাস্তবে সে তার আওতার বাইরে গিয়ে কাজ করছে, যা আইনের পরিপন্থি।’
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সীমাহীন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাজগুলো স্থবির হয়ে আছে, সমস্যা বেড়েই চলছে। সমস্যাগুলো আমাদের সকলের। সমাধানের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা বিজিএমইএ পরিচালনা করা। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রশাসক কেন নিয়োগ হলো তা আমরা জানি না। প্রশাসক আবার সহায়ক নিয়োগ দিলেন কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি অসহায়। আমরা কারখানা চালাতে পারছি না। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না। ২৬ ডিসেম্বরের সদস্যপদ নবায়ন সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিটি অভিলম্বে বাতিল করার জন্য জোড় দাবি জানাই। অন্যথায় আইনের সহযোগিতাও নেওয়া হবে। অতিদ্রুত নির্বাচনের দাবিও জানান তিনি।
বিজিএমইএ বিভিন্ন স্তরের নেতারা এসব বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে উচ্চ কণ্ঠে বলেন, দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের প্রাণের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে যতদ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এ শিল্পকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অতীব জরুরি। পিঠ আমাদের দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে চট্টগ্রাম থেকে পোশাক শিল্পের সূচনা, যে চট্টগ্রাম থেকে শিল্প সম্পর্কিত ন্যায্য দাবি আদায়ের গর্জন উঠেছে, সেই চট্টগ্রাম থেকেই আবারও প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে স্বশরীরে হাজির হবো।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস.এম. নুরুল হক। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএ’র সহায়ক কমিটির সদস্য এমডি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি এ. এম. চৌধুরী সেলিম, রাকিবুল আলম চৌধুরী, সাবেক পরিচালক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, এমদাদুল হক চৌধুরী, এ. এম. মাহাবুব চৌধুরী, হাসানুজ্জামান চৌধুরী, মোহাম্মদ মুসা, অঞ্জন শেখর দাশ, সাইফউল্লাহ মনসুর, এ.এম. শফিউল করিম (খোকন), এম. এহসানুল হক, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, রাকিব আল নাছের, গাজী মো. শহিদ উল্লাহ, মো. আবছার হোসেন প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/ এইচআই