Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাবিতে ১% পোষ্য কোটা নির্ধারণ, বাতিল চান শিক্ষার্থীরা

রাবি করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:০২ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩০

পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বুধবার রাতে রাবি শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: সারাবাংলা

স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটার হার পুনর্নির্ধারণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করলেও সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায় থেকেই পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির এক জরুরি সভায় পোষ্য কোটা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পোষ্য কোটা নিয়ে নতুন এ সিদ্ধান্তেও ক্ষোভ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা এটি পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বুধবার রাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, জুলাই বিপ্লবের মূল ম্যান্ডেট ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। সেই সংস্কার হয়নি, উলটো একটি অবৈধ ও অযৌক্তিক কোটা এখনো বহাল রেখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা কেবল ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। অথচ আমরা এক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি, প্রশাসনকে সময় দিয়েছি। আমরা স্থায়ীভাবে সব পর্যায়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি।

প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়ে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার জন্য প্রশাসনকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম ২ জানুয়ারি পর্যন্ত। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আমরা তাদের ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আমাদের আলটিমেটামে অনড় আছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কাছে এখনো ১৫ ঘণ্টা সময় আছে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার। ২ জানুয়ারি ৯টা ৪৫ মিনিটের আগে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। চিহ্নিত ফ্যাসিবাদী শিক্ষকদের তালিকা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দুজন ফ্যাসিবাদী শিক্ষককে কেন সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো, সে বিষয়ে প্রশাসনকে জবাবদিহিতা করতে হবে। এই তিন দাবি আদায়ে সহযোগিতা না করলে ৯টা ৫১ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করার জন্য। তারপর অনিদিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের শিক্ষার্থী আমানউল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় চার কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সেখানে সহায়ক বা সাধারণ কর্মচারীর কারও সন্তানদের জন্যই কোটা রাখা যৌক্তিক নয়। আমরা এই পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাই। এর ছিটেফোঁটাও যেন কোথাও না থাকে তার জন্যই আমাদের লড়াই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা রাতেই আলোচনায় বসব। তারপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

জানতে চাইলে রাবির উপউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণে ন্যূনতম এ কোটা রাখা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা যেটা ভালো মনে করবে, সেটা করুক।

এর আগে গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসন সেই কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে দেয়। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় মাস পর বুধবার বিকেলে সহায়ক ও কর্মচারীদের জন্য ১ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।

সারাবাংলা/টিআর

পোষ্য কোটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর