শেখ হাসিনার আমলে বিদ্যুৎ খাতে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশের দাবি বিএনপির
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৩ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:০৬
ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ এই দাবি জানান।
টুকু বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল, সেটা তারা পারেনি। বরং ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। এখানে আাপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুতে বিল পরিশোধ করেন.. সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটা (বিদ্যুৎ) একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিল, তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসাব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’ এটি দেখা যায় না।”
তিনি বলেন, ‘‘ক্যাপাসিটি চার্জ.. এই ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেশিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেশিনগুলো এফিসিয়েন্সি কী? এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।”
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানে নাই। তারা আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছা মতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি করব- বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি চুক্তি জন্মসম্মুখে প্রকাশ করার। উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কীভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তবর্তী সরকারের প্রথম কাজ হল জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুত্ত করা।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার বর্তমান বিনিময় হারে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।’’
টুকু বলেন, ‘‘ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেশিন খারাপ। খারাপ মেশিন এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে। আর এই লুটপাটের অংশ কারা কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।”
তিনি বলেন, ‘‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দুই বছরের সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন টেকসই না, সাসটেইনেবল না। যেকোনো সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।”
‘‘আমরা মনে করি, এখন যদি আমরা টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাব। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে, টাকা ছাপানো হবে, এতে ইনফ্লুয়েশন বাড়বে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে.. সেটা নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে টিউলিপের ব্যাপারে এবং আরও দুর্নীতি আছে”- বলেন সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে। এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবারহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে।”
টুকু বলেন, ‘‘স্মার্ট প্রিডেইড মিটার প্রকল্প… এটার যে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয় স্বজনরা আছে। তাতে তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।”
তিনি বলেন, ‘‘এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম