Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুরুষতন্ত্রকে নির্বাসনে না পাঠিয়েও উন্নয়নে অবদান রেখেছে নারীরা : বিআইডিএস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৭ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৭

বৃহস্পতিবার বিআইডিএস আয়োজিত পাবলিক লেকচারে বক্তব্য রাখেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এর প্রফেসর নায়লা কবীর

ঢাকা :  দেশের দারিদ্র্য নিরসনসহ সামাজিক অগ্রগতির পেছনে ব্যাপক অবদান রেখেছে নারীরা। তারা পুরুষতন্ত্রকে নির্বাসনে না পাঠিয়েও বোঝাপড়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছে। এছাড়া দেশ শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত দুর্বল। যেটি জুলাই বিপ্লব থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আয়োজিত এক পাবলিক লেকচারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পুনঃপর্যালোচনা পিতৃতন্ত্র: লিঙ্গ, সংস্থা এবং বাংলাদেশ প্যারাডাক্স’ শীর্ষক এই পাবলিক লেকচারে বক্তব্য রাখেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এর প্রফেসর নায়লা কবীর। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

বিজ্ঞাপন

পাবলিক লেকচারে বলা হয়েছে, সামরিক, বেসামরিক, গণতান্ত্রিক বা একনায়কতন্ত্র, এমন কী যে দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নিম্নমানের শাসন বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা গেছে। দেশ শাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বেশিরভঅগ আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং এ ধারাবাহিকভাবে নিচের দিকে রয়েছে দেশ। যা নিচের দিকের ২০ শতাংশ দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া যেই ক্ষমতায় ধাকুক না কেন, সবার রাজনৈতিক সংস্কৃতি একই।

লেকচারে নায়লা কবীর বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসন, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হার কমানো, জন্ম নিয়ন্ত্রণ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। বিশেষ করে ৮০’র দশকে এই উন্নতির যাত্রা শুরু হয়। এই সামাজিক উন্নতির পেছনে ব্যাপক অবদান রয়েছে এদেশের নারী সমাজের। কেননা, রক্ষণশীল একটি সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থা থেকে নারীরা অনেক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। ৮০ এর দশকে একই সঙ্গে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি ব্যাপক কর্মসূচী পরিচানায় নারীদের সম্পৃক্তকরণ, ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম শুরু, পোশাক রপ্তানির উন্নতিসহ নানা সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। ৯০ এর দশকে এসে আগের দশকের কার্যক্রমগুলোর ইতিবাচক ফলাফল পেরে শুরু করে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশ প্যারাডক্স শব্দটির সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম। কিন্তু নায়লা কবীর তার লিখিত একটি বইতে প্যারাডক্সের বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি দেখিয়েছেন যে, এই প্যারাডক্স অর্জনের পেছনে নারীরা কীভাবে ভূমিকা রেখেছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্য যেকোন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আরো শক্ত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। এক্ষেত্রে একে অপরের কথা শুনতে হবে, একে অপরকে জানতে হবে এবং শিখতে হবে। কিন্তু সেটি হয়নি।

পাবলিক লেকচারে নায়লা কবীর বলেন, খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বাংলাদেশ অনেক বড় পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু এই অগ্রগতির ক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রকে নির্বাসনে দেওয়া হয়নি। এই পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে নারীদের বোঝাপড়ার মাধ্যমেই অর্জনগুলো হয়েছে। কিন্তু এখনো রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এক্ষেত্রে আয় বৈষম্য দূর করার জন্য ধনীদের কাছ থেকে কর নিতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতা রয়েছে। ফলে জিডিপি ( মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির সুবিধাগুলো সমানভাবে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম কর জিডিপির দেশগুলোর মধ্যে একটি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘকালের শাসন ও শোষণের মধ্যদিয়ে এসেছে। সর্বশেষ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। ১৯৫০ সাল খেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে আয় বৈষম্য বেড়েছিল ৬১ শতাংশ। ওই সময় দেশের বেশিরভাগ বাজেট এবং বৈদেশিক সাহায্য পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েছিল। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বেশিরভাগ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যেত পাকিন্তানে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দারিদ্র্যতম দেশ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এদেশ অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ দেশে উন্নয়নগুলো কতটা টেকসই। দেশে অন্যতম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি, বিদেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিপুল কর্মসংস্থান এবং বিশেষ করে নারীদের কর্মের ক্ষেত্র বেশিরভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক ইত্যাদি।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

নারী ও পুরুষতন্ত্র বিআইডিএস পাবলিক লেকচার