ফিড-বাচ্চা সিন্ডিকেটে হুমকিতে পোলট্রি শিল্প, বাঁচাতে বিপিএর ১০ দাবি
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০০ | আপডেট: ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২
ঢাকা: ফিড ও মুরগির বাচ্চা নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে দেশের পোলট্রি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করে প্রান্তিক পোলট্রি শিল্পের সমস্যা ও সঙ্কট সমাধানে জাতীয় পোলট্রি বোর্ড গঠনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চায় বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এজন্য প্রান্তিক পোলট্রি শিল্পে মারাত্মক সংকট চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিপিএ’র সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে সঠিক দাম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংগঠনের উদ্যোগে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী রোববার (১২ জানুয়ারি) থেকে ঢাকা শহরে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের কারণে ডিম এবং মুরগির বাজারে মাঝে মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পে কর্পোরেট গ্রুপ ও প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে উৎপাদন খরচের বড় ধরনের বৈষম্য একটি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে, যা প্রান্তিক ধামারিদের টিকিয়ে রাখতে সহয়তা করবে এ খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অত্যন্ত জরুরি। দাবিগুলো হলো-
১. বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডিম ও মুরগি উৎপাদনেও অংশগ্রহণ করছে যার ফলে ছোট খামারিরা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করছে যে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাজকর্ম ফিড ও বাচ্চার উৎপাদন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, যাতে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে।
২. কর্পোরেট কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদন প্রান্তিক খামারির জন্য ক্ষতিকর। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যায়, যা খামারিদের জন্য লাভজনক নয়। এই কার্যক্রম বন্ধ হলে বাজ্যরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং যামারিরা লাভবান হতে পারবে।
৩. ফিড এবং মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি হয়, যা প্রান্তিক ধামারিদের জন্য বড় সমস্যা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ানোর ফলে যামারিরা তাদের উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছে না। এই সিন্ডিকেট বন্ধ করে, খামারিদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দেশের পোলট্রি যাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন না, যা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা তৈরি করছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়তে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য সঠিক দাম পায়।
৫. খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে ঋণ ও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করা হলে তারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে।
৬. করপোরেট সিন্ডিকেট ও অসাধু কার্যক্রমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। এই প্রণোদনা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে সহায়ক হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
৭. কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক খামারিদের জন্য আলাদা বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহ করতে পারে এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সঠিক মূল্য পায়।
৮. পোল্ট্রি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করতে হবে, যাতে তারা শুধু তাদের স্বার্থে ব্যবসা না করে, বরং পুরো খাতের উন্নতি হয় এবং প্রান্তিক খামারি দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির সুফল পায়।
৯. বর্তমানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিস্টেমটি বন্ধ করা জরুরি, যাতে খামারিরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালাতে পারে এবং নিজেদের লাভের ভাগ পেতে পারে।
১০. খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা চালু করতে হবে। এটি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং একই সাথে তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার। আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবল হোসাইন ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কাউছার আহমেদ।
সারাবাংলা/জেজে/এমপি