Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানী জুড়ে গ্যাস সংকট, ভোগান্তি পোহাতে হবে আরও একদিন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৩ | আপডেট: ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৯

রাজধানী জুড়ে আবাসিক এলাকায় তীব্র গ্যাসের সঙ্কট, জ্বলছে না চুলা – (ফাইল ছবি)

ঢাকা: এক চুলা বন্ধ করে আরেক চুলায় পানি গরম করতেও ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবারের মতো শনিবারও রাজধানীর গোপীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।

এলাকাবাসীরা জানান, গত দুই দিন ধরে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে গেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় দুই চুলা একসঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। যে এক চুলা জ্বালানো হচ্ছে এতে রান্না তো দূরের কথা, দিনের বেলা পানিও ঠিকমত গরম করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সরবরাহকারী সংস্থা ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ সূত্রে জানা যায়, এলএনজি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ভোগান্তি থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাসের চাপ কম রয়েছে পুরো রাজধানী জুড়েই। কোথাও কম, কোথায় বেশি। রাজধানীর মতিঝিল, গোপীবাগ, টিকাটুলী, হাটখোলা, ওয়ারিসহ পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে, বনশ্রী, মিরপুরের কিছু এলাকা, শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাসাবো, মুগধা, মান্ডা, মানিকনগর, বাড্ডা, বিশ্বরোপ, মৌচাক, মগবাজার, ইস্কাটন, আজিমপুর এলাকায়।

আজিমপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা সাঈদা আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন গ্যাস একেবারেই ছিল না। শনিবার সকাল থেকে নিভু নিভু জ্বলছে চুলা। তবে তা রান্নার মতো না।
ভাষানটেক এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন বলেন, গতকাল (শুক্রবার) সারাদিন গ্যাস ছিল না। সন্ধ্যার পর পাওয়া গেলেও গ্যাসের চাপ কম ছিলো। আবার শনিবার সকাল থেকে নেই।

বিজ্ঞাপন

কলাবাগান এলাকার মাসউদুর রহমান বলেন, গ্যাসের চাপ একেবারেই কম গত তিনদিন ধরে। যে গ্যাস চুলায় আসছে, এতে দুই চুলা একসঙ্গে জ্বালিয়ে রান্না করা মুশকিল।

গ্যাস সংকটের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও শেয়ার করেছেন অনেকে।

আনিসুর রহমান লিখেছেন, ‘ঢাকায় মোটামুটি সবার, সব অঞ্চলেই গ্যাস নেই।’

নাসরিন সুলতানা পিংকি লিখেছেন, ‘আমার ঘরে আছে খুব আস্তে আস্তে খিচুরি রান্না হয়েছে দেড় ঘন্টায়।’

মোরসালিন বাবলা লিখেছেন, ‘বনশ্রীতে গ্যাসের সংকট।’

অনু হকের বাসা পূর্ব তেজতুরি বাজার। তিনি লিখেছেন, ‘আমার বাসায় তো একদমই আসে না, আগে রাতে যা-ও একটু আসতো, এখন সেটাও আসে না।’

রেজিনা লিনু লিখেছেন, ‘আমি পল্লবি থাকি, সকাল সাতটায় উঠে দেড় ঘন্টা ধরে গ্যাসের চুলায় চা করেছেন।
তাপসী রাবেয়া আঁখি লিখেছেন, তার বাসায় গ্যাস নেই।

অরণ্য অশ্রু নামের একজন লিখেছেন, তিনি শ্যামলী থাকেন, সারাদিন তার বাসায় গ্যাস থাকে না।

বনানী-১ নম্বর থেকে মাহমুদুল হাসান নিবিড় লিখেছেন, ‘গ্যাসের চাপ একেবারেই কম।’

হাজারিবাগ থেকে শামীম আহমেদ লিখেছেন, ‘সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাস থাকে না, রাতে রান্না করতে হচ্ছে।’

রুদ্র নামের একজন ধানমন্ডি ১৯ থেকে লিখেছেন, গত তিন মাস ধরে তার বাসায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাসের চাপ একেবারে কম থাকে।

রাব্বী সিদ্দিকী শেওড়াপাড়া থেকে লিখেছেন, তার বাসায় গ্যাসের চাপ কম।

ওয়ারি থেকে রাজিব লিখেছেন, পুরান ঢাকার প্রায় বাসাতেই নেই।

কিশোর রায় মালিবাগ থেকে লিখেছেন, তার বাসায় গ্যাস নেই বললেই চলে।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি বাধ্য হয়ে এলপিজি কিনেছেন।

নুসরাত জাহান নিপা লিখেছেন, দুইদিন ধরে বনশ্রীতে গ্যাস নেই।

আশিষ গোস্বামী লিখেছেন, গোপীবাগে তাদের ঘরে খুব ধীরে চুলা জ্বলে।

গ্যাস সরবরাহ নিয়ে এমন অসংখ্য মন্তব্য ও স্ট্যাটাস শুক্রবার থেকে ফেইসবুকে দেখা যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন বিভাগ-ঢাকা-মেট্রো) মো. মনজুর আজিজ মোহন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিতাসের সকল গ্রাহকরাই সাময়িক এই ভোগান্তিতে রয়েছে। শিগগিরই সংকট কেটে যাবে। রোববার (৫ জানুয়ারি) থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে’ বলে জানান তিনি।

গ্যাসের এই স্বল্প চাপ শুধু রাজধানীতেই নয়, এ পরিস্থিতি গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জেও। গত দুইদিন ধরে এ সকল এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট। কিছু কিছু এলাকায় চুলা জ্বলছেই না।

এ প্রসঙ্গে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও অপারেশন ডিরেক্টর আঞ্চলিক বিক্রয় ডিভিশন নারায়ণগঞ্জ প্রকৌশলী মো. সেলিম মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য গত দুই দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ তার নিজের বাসাতেও গ্যাস সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনদিনের কথা বলা হয়েছিল। সে হিসাবে ৫ জানুয়ারি থেকে স্বাভাবিক হওয়ার কথা।’

তিতাস সুত্রে জানা যায়, তিতাসের বিতরণ এলাকায় ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন সরবরাহ করা হয়। এলএনজি টার্মিনাল মেরামতের কারণে তা ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ কম হচ্ছে। সে কারণে কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় লাইনে সমস্যা থাকায় আগে থেকেই সেসব এলাকায় গ্যাসের চাপ কম, কোথাও কোথাও সরবরাহও ঠিক মত করা যাচ্ছে না।

তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক ( অপারেশন) প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই গ্যাসের সংকট রয়েছে। শীত মৌসুমে গ্যাসের সংকট বেশী দেখা দেয়। এরমধ্যে এলএনজি টার্মিনালের কাজ চলছে, সে কারণে সরবরাহ বন্ধ। সব মিলিয়ে সরবরাহের জন্য আমাদের যে চাহিদা তার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছি। যে কারণে আবাসিকে বেশি চাপ দেখা দিয়েছে।’

কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ শুরু করলে হয়তো গ্যাসের চাপ বাড়বে। তার জন্যও আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) জানিয়েছিল যে, বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে তিন দিন এক্সিরালেট এনার্জি পরিচালিত টার্মিনাল থেকে ৭২ ঘন্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ সময় অন্য টার্মিনাল থেকে দিনে ৫৭ থেকে ৫৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ সময় দিনে ১৫ থেকে ১৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যাবে। এতে দেশের কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এর জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা।

প্রসঙ্গত দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা যায়।

বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওইদিন সারাদেশে ২ হাজার ৫০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে, যা অন্য সময়ের চেয়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম। ওইদিন এলএনজি টার্মিনাল থেকে এসেছিলো ৫৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্য সময় এই সোর্স থেকে ১১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়।

সারাবাংলা/জেআর/আরএস

গ্যাস সঙ্কট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর