মা ও মায়ের ‘প্রেমিকে’র হাতে খুন হয় শিশু আমেনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫০ | আপডেট: ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৯
ঢাকা: রাজধানীর দিয়াবাড়ির লেকপাড় থেকে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ছয় মাস বয়সী এক শিশুর মরদেহ। গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে তদন্তে নামে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসে, মায়ের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে খুন হয় শিশুটি।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) গভীর রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত শিশু আমেনার মা মোসা. ফাতেমা বেগম (২৫) ও তার প্রেমিক মো. জাফরকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাতেমা বেগম তার সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। জাফরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
পল্লবী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ১২৪ নম্বর পিলার সংলগ্ন লেকপাড় হতে একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায় তার গলায় আঘাতের দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে মৃত শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটির নাম আমেনা ও তার বয়স ৬ মাস। পরিচয় শনাক্তের পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) গভীর রাতে পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত শিশুটির মা মোসা. ফাতেমা বেগমকে (২৫) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন, নিবিড় তদন্ত ও ফাতেমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় মো. জাফর (৩৬) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শিশুটির মা ফাতেমা বেগমের বিয়েবর্হিভূত সর্ম্পকের কারণে শিশু হত্যার ঘটনাটি ঘটে। ওই রাতেই জাফরকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানা পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতার দুজনেই বিবাহিত এবং পল্লবী এলাকায় বসবাস করতেন। জাফর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শিশুটির মা ফাতেমা আগে ওই কারখানায় কাজ করার সুবাদে জাফরের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। ফাতেমার স্বামী গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করায় কর্মসূত্রে বাসার বাইরে থাকতেন বেশিরভাগ সময়। এ সুযোগে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিয়েবর্হিভূত সর্ম্পকে লিপ্ত হন। তাদের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৮ টার দিকে জাফর ফাতেমার বাসায় আসেন। শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তারা বিরক্ত হন। এ কারণে শিশুটিকে প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করা হয় এবং পরে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে বিছানার চাদর দিয়ে শিশুটির মরদেহ মুড়িয়ে কাপড়ের একটি শপিং ব্যাগে ঢুকানো হয়। তারপর জাফর শপিং ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসে। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গ্রেফতার ফাতেমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ক্লুলেস চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে থানা সূত্রে আরও জানা যায়, মৃত শিশুটির পরিচয় উদঘাটনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারণা চালানো হয়। যার ফলে শিশুটির পরিচয় উদঘাটিত হয়। পরবর্তী সময়ে নিবিড় তদন্তের ফলে এই মামলার প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়।
গ্রেফতার জাফর ছয়দিনের পুলিশ রিমান্ডে পল্লবী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। জাফরের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমপি