Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদ আসে, ঈদ যায়, তবুও অপেক্ষা ফুরায় না!


১৬ জুন ২০১৮ ২০:২০ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ২১:৩৯

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ইশতিয়াকের (ছদ্মনাম) গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ৬ তলার একটি রুমে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। বাইরে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। তাতে ইশতিয়াকের কিছু যায়-আসে না।

শনিবার (১৬ জুন) ঈদ উল ফিতরের দুপুরে তার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার।

তিনি জানান, তার মা মারা গেছেন বহু আগে। বাবা বেঁচে থাকলেও দেশের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করার মতো বাড়তি সময় ও অর্থ তার নেই। একটা টিউশনি করে চলেন। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন চাকরির দৌড়ে আছেন। এখন ভালো একটি চাকরিই হবে তার জীবনে সব থেকে আনন্দের মূহুর্ত। জ্বর নিয়ে পড়াশোনা করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মনোযোগ রাখতে পারছেন না। শরীর ও মনের অশান্তি বিষণ্ন করে তুলেছে তাকে। ঈদের দিন দুপুরে হলের দেয়া বিশেষ খাবার খেয়েছেন তিনি।

ঈদে বিজয় একাত্তর হল থেকে দেওয়া বিশেষ খাবার ইশতিয়াকের মতো ৬০ জন নিয়েছেন। এরকম সূর্যসেন হলের ১২০ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৯০ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৭০ জন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪০জন দুপুরের বিশেষ খাবার নিয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক হলে কিছু বিদেশি মুসলিম শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা ক্যাম্পাসে ঈদ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি হল ও ছাত্রাবাসে প্রায় ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা পরিবার ছাড়া ঈদ করছেন। এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে নিঃসঙ্গ ঈদের পিছনে তাদের যুক্তি ও কারণগুলো জানা গেল।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্র মনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কয়েকটিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত কিছু না হওয়ায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ৩৭তম এর রেজাল্টে নন-ক্যাডার হয়েছেন। সামনের ৮ আগস্ট থেকে ৩৮ এর লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি যাবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী কামাল খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পড়ালেখা ও রাজনীতি দুটোর জন্যই ঢাকায় ঈদ করছি। তবে ভিডিও কলের মাধ্যমে মা ও পরিবারের অন্যান্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। এলাকায় গেলে অনেকেই জানতে চান, পড়ালেখা শেষ করে চাকরি শুরু করেছি কি না। পছন্দমতো কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।

একই হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ঈদের দিনে আমরা শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করি, খোঁজ-খবর নেই, গল্প করি। সূর্যসেন হলের ছাত্ররা যারা হলে ছিলেন, তাদের সবাইকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিলো যে ঈদের দিন দুপুরে হলে বিশেষ খাবার দেওয়া হবে।

অধিকাংশ হলের প্রভোস্টরা হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং অনেকে একসঙ্গে দুপুরে খেয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মফিজুর রহমান হলের ছাত্র ও সহকর্মীদের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ঈদের দিনে বিভিন্ন হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদেরকে পরিবারের অভাব দূর করতে আমরা চেষ্টা করি। সকালে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফলমূল ও নাস্তা দেওয়া হয়, দুপুরে দেওয়া হয় বিশেষ খাবার। এছাড়া আমরা সারা দিন হলে সময় দেই যাতে তারা পরিবারের অভাব কিছুটা হলেও ভুলতে পারে।

সারাবাংলা/এমআইএস/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর