‘উসকানিদাতা’ সাংবাদিকদের নিয়েও তদন্তের পক্ষে সংস্কার কমিশনপ্রধান
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৭ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘উসকানিদাতা’ সাংবাদিকদের বিষয়ে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ মতামত জানান তিনি।
সাংবাদিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা তাদের সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনো তদন্ত সংস্থা না। আমরা কোনো অপরাধের তদন্ত করতে পারব না। তবে হ্যাঁ আমরা এটা বলতে পারি, যারা উসকানিদাতা তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হোক। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
‘উসকানি দাতাদের শাস্তি দেওয়া হবে। এটা ফৌজদারি অপরাধ। বিশেষ করে হত্যার জন্য যদি উসকানি হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে যে বৈষম্যগুলো রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে, সে বৈষম্যের শিকার যারা হয়েছেন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি হিসেবে সাংবাদিক হিসেবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন উঠেছে। এটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘হয়রানি মামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, দিনের পর দিন কাজ করতে পারেননি সে সমস্ত ব্যক্তিদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়গুলো আসলেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করা দরকার, যেন এসব মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।’
রাজনৈতিক দলবাজি সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার পেশার জন্য। কারণ দলীয় রাজনীতির আদর্শ থেকে খবর সেন্সর ও বিকৃত করা সাংবাদিকতাকে প্রভাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালা নেই, কথাটি ঠিক না। সাংবাদিকতার অনেকগুলো নীতিমালা আছে। আবার আমরা যদি বলি সম্পাদকীয় নীতিমালা নেই। সেটা সত্য কথা। সেটার জন্য আমরা সম্পাদক পরিষদকে বলেছি। আসলেই একটি জাতীয় নীতিমালা থাকা দরকার। আমরা আশা করছি, সম্পাদক পরিষদ সে উদ্যেগটি নেবেন।’
সংবাদপত্র সংক্রান্ত নীতিমালা থাকলেও সেটা কার্যকর হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকার ক্ষেত্রে অনেক নীতিমালা আছে। সমস্যা হচ্ছে সরকার সে নীতিমালাগুলো মানেনি। সরকার মানেনি বলতে, সরকারের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা অন্য কোনো কারণে সেগুলো মানেননি। পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রশ্ন, পেশাদার সাংবাদিকের সম্পাদক হওয়ার প্রশ্ন এগুলো কিন্তু নীতিমালায় আছে।’
‘সংবাদপত্র সংক্রান্ত নীতিমালায় আছে যে, পত্রিকার সম্পাদক হতে গেলে পাঁচ বছরের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। কিন্তু অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ভাই ও পুত্রকে সম্পাদক বানিয়ে দিচ্ছে, যার কোনো সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নেই। সেটা আবার সরকার গ্রহণ করছে। নীতি থাকলেও সেটা কার্যকর হচ্ছে না। এটা আমাদের বড় সমস্যা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরও একটি জাতীয় প্রেস কমিশন বাংলাদেশে হয়েছিল। সেটা ছিল প্রথম প্রেস কমিশন। ১৯৮৩ সালে সে প্রেস কমিশন গঠিত হয়েছিল। আমাদের বিভিন্ন কারণে হয়রানি করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বলা হয়, তুমি যে রিপোর্ট করেছো সেটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তুমি যে মতামতের কলাম লিখেছো এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এটা বলেই মামলা হয়।’
‘ওই সুপারিশে ছিল জাতীয় নিরাপত্তার এ সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য না। তখনই জাতীয় নিরাপত্তার মামলা হতে পারে যখন দেশ যুদ্ধে থাকে। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি, মামলা দিয়ে কন্ঠরোধ করা যাবে না। এরকম আমাদের পেছনে কী দৃষ্টান্ত ও নজির আছে সেগুলো নিয়ে এবং মতামতের ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা তৈরি করার চেষ্টা করছি।’
এসময় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান ও বেগম কামরুন্নেছা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এমপি