সুপারিশ-নিয়োগপত্র পেলেও চাকরি পাননি ৬৫৩৯ প্রাথমিক শিক্ষক
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০১ | আপডেট: ৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:০৯
ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশ ও নিয়োগপত্র পেলেও চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি ছয় হাজার ৫৩১ জন। ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চূড়ান্ত ফলাফলে তারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরে হাইকোর্টের এক আদেশে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মানবিক বিবেচনায় অবিলম্বে চাকরিতে যোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমান তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন যেন থামছেই না। ২০২৩ সালের ১৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ এর ২৯ মার্চ। এ ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২১ এপ্রিল। এরপর ১২ জুন শেষ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরই প্রেক্ষিতে কোন নিয়ম অনুসারে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে তার ব্যাখ্যা চেয়ে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসরণ করে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয়।
এর আগে, ২০১৮ সালে সরকার যখন কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল, তখনও প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে। যা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ নামে পরিচিত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেসুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোটা নিয়ে হাইকোর্টের যে রায়, সেটা নতুন চাকরির ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে ২৩ জুলাইয়ের পরে রেল, এলজিইডিসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগের আগের বিধিমালা অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করেছে এবং নতুন অনেক সার্কুলারে আগের বিধিমালা অনুসরণ করেই সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কেন নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে ফলাফল প্রকাশ করা হলো না তা জানতে চেয়ে ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করে, যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এরমধ্যে চেম্বার জজ আদালত, আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্টে তিনটি শুনানির পরও কোনো সুরাহা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ১১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৫ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা অফিস এবং ৮ ডিসেম্বর স্কুল পদায়ন সম্পর্কিত নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়। নিজ নিজ জেলা সিভিল সার্জনে মেডিকেল টেস্ট এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানও শেষ করা হয়েছে। অনেক জেলার কিছু কিছু উপজেলায় চূড়ান্ত সুপারিশ প্রাপ্তরা যোগদান পত্রও হাতে পেয়েছে।
এমনকী তাদের মধ্যে অনেকে সরকারি চাকরি করতেন, যারা এই প্রাথমিকে যোগ দিতে কর্মরত চাকরি ছেড়েও দিয়েছেন। ফলে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরও যোগদান করতে না পেরে ছয় হাজার ৫৩১টি পরিবার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সবাই একপ্রকার মানসিক বিপর্যয় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ মুহূর্তে তাদের দাবি তারা অনতিবিলম্বে যোগদান করতে চান।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ