চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি, দ্বিতীয়বারের ফুলকপি চাষে লোকসানে কৃষকরা
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:১৭
চুয়াডাঙ্গা: মৌসুমের প্রথম চাষে বেশি লাভ হয়েছিল বলে দ্বিতীয়বার ফের ফুলকপি চাষ করেছেন চাষীরা। কিন্তু শীতকালীন এই সবজির বাজার আগের মতো নেই। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দ্বিতীয়বারের চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
এদিকে দ্বিতীয়বার চাষ করা শীতকালীন এই সবজির দাম না পেয়ে জমির কপি সেখানেই নষ্ট করছেন কৃষকরা। কেউ আবার ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন, আবার অনেক চাষী ট্রাক্টর দিয়ে কপি খেত মাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের কাজ করে ‘লোকসান’ হয়েছে বলে কৃষকরা সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, প্রথম চাষে ফুলকপির দাম ভালো পাওয়ায় ফের অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ কৃষক দ্বিতীয়বার ফুলকপির চাষ করেন। এ জন্যই চলতি বছর চাহিদার তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন বেশি ফুলকপি উৎপাদন হয়েছে। সেজন্য দ্বিতীয়বার আর কৃষকরা দাম পাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ৬২ হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন হয়। আর এই ২০২৩ সালের উৎপাদনকেই ২০২৪ সালে চাহিদা দেখানো হয়। ২০২৪ সালে ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর ফুলকপি চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন হয়েছে ৭০ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় ৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের চাষী সোনা মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফুলকপি কেনার খদ্দের নেই। এবার অনেক বেশি কপি উৎপাদন হয়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সব কপি। বাধ্য হয়েই আমার ক্ষেতের ১০ বিঘা জমির ফুলকপি ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছি। ১০ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন চাষের খরচই উঠছে না। এতে প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’
ওই গ্রামের চাষী সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। গতবছরেও প্রতি বিঘা জমির ফুলকপি ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার ৪ বিঘা জমির কপি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। চাষের খরচই ওঠেনি। চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঋণের বোঝা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’
দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের সবজি চাষী খালিদ হাসান সারাবাংলাকে জানান, চলতি মৌসুমে গ্রামের মাঠে তিনি দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন। এতে তার চারা, বালাইনাশক, সার, সেচ ও শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু চাষের ফুলকপি বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এতে তার চারা কেনার খরচও উঠবে না।
একই উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুকভরা আশা নিয়ে এবার দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি-বাঁধাকপি আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তবে বাজার দর কমে যাওয়ায় অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতিবছর এই সময় মাঠে মাঠে পাইকারি মহাজনরা ঘুরে ঘুরে কপি কিনতো। এবার বহুদূর তাকিয়ে থেকেও একজন মহাজনের দেখা মিলছে না।’
দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে পাইকারি এক সবজি ব্যবসায়ীর কাছে এক লাখ টাকায় কপি বিক্রি করি। চুক্তি অনুযায়ী তিনি আমাকে ২৮ হাজার টাকা অগ্রিম দেন। গত কয়েকদিন ধরে সবজির বাজার দর কম। তাই তিনি আর কপি নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে তিনি অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। খেতের সব কপি দিতে চাওয়ার পরও তিনি রাজি হচ্ছে না। এমন অবস্থায় মহাবিপদে পড়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক চাষী প্রথমবার ফুলকপি চাষ করে ভালো দাম পায়। পরে বেশি লাভের আশায় দ্বিতীয়বার চাষ করে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা আর সবজিটির দাম পাচ্ছেন না।’
সারাবাংলা/পিটিএম