খালে পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন, গ্যাস সংকটে ভোগান্তিতে বাসিন্দারা
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩০ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বেশকিছু এলাকায় গত দু’দিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীর হালিশহরের বড়পোল এলাকায় খালের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে একটি সঞ্চালন লাইন কেটে ফেলায় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত অথবা রোববার সকালের মধ্যে এসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা।
এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল বন্ধ থাকায় সরবরাহ সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছে বলেও জানান তারা।
কেজিডিসিএল’র প্রকৌশল পরিষেবা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল আজম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হালিশহরের বড়পোলে আমাদের ১০ ইঞ্চি একটা পাইপালাইন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেখানে সেনাবাহিনী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় একটি খাল খনন করছে। সেই কাজ করার সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি পাইপলাইন ফেটে গেছে। এজন্য পুরো হালিশহরে, আগ্রাবাদের কিছু অংশে এবং খুলশীতে গ্যাসের সরবরাহ কোথাও আংশিক, কোথাও পুরোপুরি বন্ধ আছে।’
প্রকৌশলী শফিউল জানিয়েছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইনটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে।’
তবে নগরীর আসকার দিঘীর পাড়, দেওয়ানবাজার, ডিসি রোড, ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালীসহ আরও বিভিন্ন এলাকা থেকে কোথাও গ্যাসের স্বল্পচাপ, আবার কোথাও মাঝে মাঝে বন্ধের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নগরীর দেওয়ান বাজারের বাসিন্দা আনজুমান আরা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যার পর থেকে গ্যাস একদমই ছিল না। রাতে হোটেল থেকে এনে ভাত খেয়েছি। শনিবার সকালে এলেও চাপ ছিল একদম অল্প। দুপুরের দিকে আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সব বিল্ডিংয়ে এমন সমস্যা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও দুয়েক বিল্ডিংয়ে এমন হচ্ছে।’
কেজিডিসিএল’র এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘হালিশহর, আগ্রাবাদ, খুলশী এলাকায় শুধু পাইপলাইন কেটে যাবার কারণে সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য এলাকায় যেটা হচ্ছে সেটা মহেশখালীর একটি ফ্লোটিং ইউনিট বন্ধ থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটাও বিচ্ছিন্ন দুয়েকটা এলাকায় স্বল্পচাপের মতো সমস্যা হচ্ছে। বড় আকারে গ্যাস সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহেশখালীর এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে মোট ৭২ ঘণ্টা আরএলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এতে দেশব্যাপী গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি হলেও সোমবার থেকে ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হবে।
কেজিডিসিএল’র ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্ভর। চট্টগ্রামে নিয়মিত গ্যাসের চাহিদা ৩২০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে দুটি সার কারখানা চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি বন্ধ থাকায় এ মুহুর্তে গ্যাসের চাহিদা ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।
মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি ইউনিট থেকে সরবরাহ বন্ধ হলেও আরেকটি থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস মিলছে। সুতরাং চাহিদা কম থাকায় চট্টগ্রামে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি কেজিডিসিএল’র ওই কর্মকর্তার।
সারাবাংলা/আরডি/এমপি