Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ীকে চাপাতি হাতে কোপাচ্ছে কারা?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:০০ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:০২

২ ব্যবসায়ীকে কোপানোর ঘটনায় শনিবার (১১ জানুয়ারি) মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সড়কের পাশে মাথায় হেলমেট ও মুখোশ পড়ে চাপাতি হাতে একদল যুবক এলোপাতাড়ি দু’জনকে কোপাতে দেখা যাচ্ছে। আর লোক দু’টি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছেন।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক এলিফান্ট রোডে মাল্টিপ্লান সেন্টারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ১২ টার দিকে নিউ মার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহসীন উদ্দিন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনের সড়কে গাড়ি আটকে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বীরদর্পে পালায় সন্ত্রাসীরা। অতর্কিত হামলার শিকার দুই ব্যবসায়ী হলেন, এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্য সচিব এহতেসামুল হক।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে তাদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাতে ও পায়ে মারাত্মক জখম নিয়ে এহতেসাম এখনো হাসপাতালে ভর্তি। হাতে জখম হওয়া দীপুকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

মাল্টিপ্লান সেন্টারের আশপাশের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোপানোর সময় তাদের বাঁচার আকুতি ও চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ খুব কাছেই ছিল পুলিশ ফাঁড়ি, সামনে ও পেছনে ছিল ট্রাফিক বক্সও।

দুই ব্যবসায়ীকে কোপানোর ঘটনায় শনিবার (১১ জানুয়ারি) মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে মানববন্ধন করেছে ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধন থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধন থেকে চার দফা দাবি পেশ করা হয়, ১. সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে দাঁড়াতে হবে। ২. গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ৩. সরকারের উদ্যোগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ করা যায়। ৪. সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখা ও বিশ্বের সামনে শান্তি, সহনশীলতা, ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার দৃঢ়ভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।

হামলার ঘটনায় শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত নিউমার্কেট থানায় কোনো মামলা নথিভুক্ত হয়নি। গ্রেফতার হয়নি হামলাকারীদের কেউই।

ভুক্তভোগী আহত ব্যবসায়ী ওয়াহেদুল হাসান দীপু বলেন, ‘আমরা একসঙ্গেই এই ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) অফিস থেকেই বের হয়েছি। উনার (এহতেসাম) বাসা জিগাতলায়। কখনো সায়েন্সল্যাবের সামনে থেকে উনি রিকশা নিয়ে চলে যান। কাল রাতে উনি হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি বের হই গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে ছিল দু’জন বন্ধু আর ড্রাইভার। ড্রাইভার যখন সামনে যাচ্ছিল মুখোশ পরা একজনকে দেখি রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে। আমার গাড়ি যত সামনে যাচ্ছিল ওই মুখোশধারী তত কাছে আসছিল। আমি যখন ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি ব্যাক করো। এরই মধ্যে ওই মুখোশধারী দৌড়ে এসে গাড়িতে কোপানো শুরু করল। সামনেই এহতেসামুল হককে কোপানো হচ্ছিল। উনি বারবার বাঁচান, বাঁচান বলে চিৎকার করছিলেন। আমার গাড়িতেও কোপানো হচ্ছিল। আমি তখন নিজেই দৌড়ের ওপরে।’

ওয়াহেদুল হাসান দীপু আরও বলেন, ‘তাদের এলোপাতাড়ি কোপে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়, লুকিং গ্লাস খুলে যায়। দরজা খোলার চেষ্টা করে। আমি লাথি দিয়ে একজনকে ফেলে দিই। এরপর দৌড়ে নেমে মাল্টিপ্ল্যানের ব্যবসায়ী অফিসে ঢুকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোনকল করে ঘটনাটি জানাই।’

দীপু অভিযোগ করেন, ‘চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। ২০/২২ জনের মতো ছিল ওরা। বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ না নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পকেটে হাত দিয়ে। হয়তো ওদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সুযোগ পেলে গুলি করে দিতো।’

কারা হামলা করল? জানতে চাইলে ভুক্তভোগী দীপু বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এটি পরিকল্পিত হামলা। এটি ব্যবসায়িক এলাকা। এখানে প্রচুর চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। কারা চাঁদাবাজি করে সেটাও সবার জানা। আমি আর কী বলব! হামলা তো হলোই, বেশি কিছু বললে আবারও হামলার শঙ্কা থেকে যায়। আপনারা (সাংবাদিক/পুলিশ) খুঁজে বের করেন কারা এসব করছে। আমার মনে হয়, এরা লোকাল সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীর কোনো দল থাকতে পারে না। আগেও ছোটখাটো ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এমন কখনো হয়নি।’

চাঁদাবাজি নাকি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে এমন হামলা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট এলাকায় চিহ্নিত চাঁদাবাজ আছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী আছে। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আমি মনে করি, আমার সঙ্গে অন্য কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

তবে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যারা এই মার্কেটের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি, কাজ নেওয়া, দখলদারিত্ব বজায় রাখার কাজে জড়িত ছিলেন, তারাই এ হামলা করে থাকতে পারেন।’

উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের পর মার্কেট ও সমিতির নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন এসেছে, নতুন কমিটি হয়েছে। সেই কমিটির নেতৃত্বে যিনি আসীন তিনি সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই দীপু। সেই দীপুই কাল রাতে আহত হয়েছে। সুতরাং দ্বন্দ্ব বা ভাগ-বাটোয়ারার ক্যাচাল স্পষ্ট। এটাই বড় কারণ মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ বলেন, ‘দুই ব্যবসায়ীর ওপর মার্কেটের সামনে অতর্কিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িতদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

কোপাচ্ছে কারা? চাপাতি টপ নিউজ ব্যবসায়ী মাল্টিপ্লান সেন্টার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর