Tuesday 15 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত, তিনি ডাকাতির সুবিধাভোগী: ড. ইউনূস

সারাবাংলা ডেস্ক
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৬ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৪

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং টিউলিপ সিদ্দিক।

লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তিনি (টিউলিপ) প্লেইন (সরাসরি) ডাকাতির সুবিধাভোগী, তাহলে তার ওই সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এ নিয়ে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের কয়েকজন টিউলিপের বিনামূল্যের ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

টিউলিপ ব্রিটেনের লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

আরও পড়ুন- এবার টিউলিপকে বরখাস্তের আহ্বান যুক্তরাজ্যের বিরোধী নেতার

সম্প্রতি সানডে টাইমসসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পানামা পেপারসে কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা একটি অফশোর কোম্পানি কিনেছিল, এমন একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন বাস করেছেন টিউলিপ। বাড়িটি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায়। ওই অফশোর কোম্পানির সঙ্গে দুজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। যদিও টিউলিপ এর আগে অভিযোগ তুলেছিলেন, এই ধরনের ট্রাস্ট ব্যবহার করা হয় স্বচ্ছতা না থাকলে।

বিজ্ঞাপন

হাসিনা রাশিয়ার সঙ্গে যে পরমাণু শক্তি চুক্তি করেছিলেন, সেটি নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত চালাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, টিউলিপ ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং এ চুক্তি থেকে লাভবান হয়েছেন।

হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ অবশ্য এই চুক্তি থেকে লাভবান হওয়া বা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে টিউলিপ ও তার পরিবার লন্ডনে আওয়ামী লীগের সদস্য বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেনা পাঁচটি সম্পত্তি পেয়েছেন বা ব্যবহার করেছেন। যদিও এগুলো নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে না।

সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, সিদ্দিকের মতো একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই যখন অভিযোগের মুখে থাকেন, তা আসলে ‘নির্মম রসিকতা’ হয়ে যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হলেন, তারপর [লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে] নিজের পক্ষে সাফাই গাইলেন। হয়তো আগে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন যখন বুঝতে পেরেছেন, তখন তো বলা উচিত: “দুঃখিত, তখন আমি বিষয়টি বুঝিনি, আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং পদত্যাগ করছি।” কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো নিজের পক্ষে সাফাই গাইছেন।’

তবে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, টিউলিপের পদত্যাগ করা উচিত কি না, তা তার বলার বিষয় নয়।

প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক এক অফিশিয়াল প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের এলিট শ্রেণি প্রতি বছর দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এই অর্থের একটি অংশ বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পত্তি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কীভাবে টাকা চুরি হয়েছে। কিন্তু এটা চুরি নয়—কেউ চুরি করলে তা গোপন রাখে। এটা প্লেইন ডাকাতি।’

শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা লন্ডনে যেসব সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন, সেগুলো এই ধরনের ডাকাতির অংশ হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, এটা প্লেইন ডাকাতির ব্যাপার। আর কিছু নয়।’

‘যুক্তরাজ্যের কোনো পার্লামেন্ট সদস্য যদি এতে জড়িত থাকেন, তবে এটা অবশ্যই বড় ইস্যু। …আমরা তো আগের সরকারের সব লুটপাটে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই আপনারা এই ইস্যু বিশ্ববাসীর নজরে আনায় আমরা স্বস্তি বোধ করছি।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, দুর্নীতিতে গোটা বাংলাদেশ কলুষিত হয়ে গেছে। দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, ‘”কলুষিত” শব্দটিও খুব কম হয়ে যায়। দেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। [হাসিনার শাসনামলে] বিন্দুমাত্র সততা বা স্বচ্ছতা ইচ্ছা ছিল না। তারা নির্দ্বিধায় সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ অবস্থান ১৪৯তম। বাংলাদেশের নিচে রয়েছে নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া ও রাশিয়া।

টিউলিপের সম্পত্তিগুলো নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করা উচিত কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘অবশ্যই।’ তিনি আরও বলেন, কমিশনের উচিত ‘পুরো বিষয়টি’ খতিয়ে দেখা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগের সহযোগীদের কেনা সম্পত্তি যদি সম্ভব হয়, তবে ফেরত আনা উচিত। ‘এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য। কীভাবে সেগুলো ফেরত আনা যায়। কারণ এখানে জনগণের টাকার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। আর জনগণ বলতে আমি ওই বিলিয়ন ডলারের মানুষদের কথা বলছি না, সাধারণ মানুষের কথা বলছি।’

বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউনূস। ব্রিটেনে এফবিআইয়ের সমতুল্য সংস্থা এনসিএ গত অক্টোবরে ঢাকায় কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। অনুরোধ পেলে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি, এমনকি জমাকৃত অর্থও ফ্রিজ করতে প্রস্তুত আছে সংস্থাটি।

টিউলিপকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই কেলেঙ্কারি নিয়ে এই প্রথম মন্তব্য করলেন ড. ইউনূস। এতে টিউলিপের ওপর পদত্যাগের চাপ আরও বাড়বে।

এদিকে টিউলিপ গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী দফতরের এথিকস উপদেষ্টার কাছে হাজির হয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি কোনো ভুল করিনি।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার টিউলিপকে সমর্থন দিয়েছেন। এথিকস উপদেষ্টার তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

টিউল্পের পরিবারের ব্যবহৃত বা মালিকানাধীন সম্পত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের পুরো আইডিয়া, উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতি হলো তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা। আমাদের নথিপত্র লাগবে। সাধারণত যেমন হয়, তারচেয়েও নিরেট হতে হবে সেসব নথিপত্র। …কারণ যেকোনো আইনজীবী সহজেই বলে দিতে পারেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে, যাতে এসব প্রমাণকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বাতিল করে দেওয়া না হয়। নিরেট প্রমাণ থাকতে হবে। যখন যুক্তরাজ্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে কাজ হবে, এটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। কারণ তখন কেউ আর বলবে না, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সারাবাংলা/ইআ

টিউলিপ সিদ্দিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর