পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২১
ঢাকা: প্রকল্প সংশোধনে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়মানুযায়ী প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত তিন মাস আগে প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করার কথা এবং প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রকল্পের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। সাড়ে ৫ বছরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) প্রস্তাবটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) কাইয়ুম আরা এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো.আব্দুর রউফ বৈঠক শেষে সারাবাংলাকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে সংশোধনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হয়। এ বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যে, অনেক আগেই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়য়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে দেরি হয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন প্রস্তাবে অসঙ্গতি ও অস্পষ্টতা রয়েছে। সেগুলো স্পষ্ট করে সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৫১ কোটি ৪৭ লাখ ১২ হাজার টাকা। সেখান থেকে ২৫ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা কমিয়ে এখন ৪২৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ব্যয় কমলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যয়।
অন্যদিকে প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বর অর্থাৎ ২ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এখন আবার এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধি অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন
পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনের বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু অঙ্গে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল পরিবর্তন হয়েছে। নির্মাণ ও পূর্তকাজের কিছু অঙ্গের প্রাক্কলিত রেট শিডিউল ২০১৮ এর পরিবর্তে হালনাগাদ রেট শিডিউল ২০২২ অনুযায়ী নির্ধারণ
করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ, চতুর্থ তলা ভিতসহ চতুর্থ তলা খামার ভবনের আনুভূমিক সম্পসারণ কাজ, ১০ তলা ভিতের উপর ১০ তলা ছাত্রী হল-৬০০ সিট, ৪ তলা ভিতের উপর ৪ তলা পর্যন্ত আনুভূমিক সম্প্রসারণ কাজসহ নির্মাণ ও পূর্তকাজের কিছু অঙ্গের ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের পূর্ত কাজগুলোর ড্রইং, ডিজাইন, প্রাক্কলন ইত্যাদির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় দীর্ঘ প্রায় ১২ মাস পর গত ২১ জুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, নির্মাণ স্থাপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণ, নির্বাচিত সাইটের সয়েল টেস্ট শেষ করাসহ এ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ড্রইং, ডিজাইন প্রস্তুত করে দরপত্র আহবানে দেরি হয়েছে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইংয়ের মতামতে বলা হয়েছে, পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্ততঃ তিন মাস আগে প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এছাড়া প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে না। এই আরডিপিপি প্রক্রিয়াকরনের জন্য গত ১২ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, যা বিদ্যমান পরিপত্রের ব্যত্যয়।
মতামতে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ১৬৬ কোটি ২৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা (৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং বাস্তব অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পের মূল অনুমোদিত অঙ্গ থেকে ৭টি ভৌত অঙ্গের কাজ বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপরও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। গত সাড়ে ৫ বছরে প্রকল্পের কাজে মন্থর গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরো বলা হয়েছে, মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) থেকে মূলধন খাতের ১০টি অঙ্গ বাদ দিতে হবে; যার মোট ব্যয় ৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া, রাজস্ব খাত থেকে বিভিন্ন অঙ্গ বাদ দেয়ার ফলে ব্যয় কমেছে ৮ কোটি টাকা।
অপরদিকে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা কমার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ মূলধন খাতে বিভিন্ন অঙ্গে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রস্তাবিত আরডিপিপি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এর যেসব ভৌত কাজের চুক্তি ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী শেষ হয়েছে, এর প্রতিটির বিপরীতেই সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয়ের প্রাক্কলন বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভবনের ফ্লোর এরিয়া বৃদ্ধি না পেলেও অন্যান্য কাজের পরিধি, ধরণ পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈঠকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের আওতাধীন আসবাবপত্র অঙ্গের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) আসবাবপত্র ক্রয় অঙ্গে ১২ হাজার ২৪৩টির বিপরীতে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকার প্রস্তাব ছিল। বর্তমানে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনীতে ৩৭৫টি সংখ্যা কমে ৩ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ২১ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংখ্যা কম হলেও ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
এছাড়া বেগম রোকেয়া হলের একটি প্রার্থনা কক্ষের জন্য ৪৮টি বুক সেলফ বাবদ ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জীত ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায় যে,ভূমি অধিগ্রহণ অঙ্গে ২০ একর জমির বিপরীতে গত জুন পর্যন্ত ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এ খাতে মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এখন প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় কীভাবে শেষ করা হয়েছে- সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
অন্যান্যের মধ্যে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি, ৪ তলা ভিতবিশিষ্ট ২ তলা গবেষণাগার ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ৫০০ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নসহ ১ হাজার ৫০০ কেভিতে রূপান্তরসহ কিছু নতুন অঙ্গের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামত জানা প্রয়োজন। এছাড়া, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি অঙ্গটি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অর্থবিভাগের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয় জানা প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস
‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প