Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোগীর চাপ থাকলেও ভোগান্তি নেই


১৭ জুন ২০১৮ ২০:১৩

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে (ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার) অপেক্ষা করছেন চল্লিশোর্ধ এক নারী। মুখে কাপড় দিয়ে উদ্বিগ্ন চোখে কাঁচের দরোজার এপাশ থেকে ওপারে ভেতরে দেখার চেষ্টা করছেন। কে আছে ভেতরে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়ে রয়েছে। কিন্তু আমাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না, মেয়েটার কী অবস্থা বুঝতে পারছি না’, বলে আবার উঁকি দেন তিনি। ভেতরে দেখা যায়, প্রতিটি বেডে যেমন রোগী রয়েছে, তেমনি রয়েছেন চিকিৎসক নার্সরাও। ব্যস্ত হাতে তারা প্রত্যেকের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

কথা বলে জানা গেল, মনোয়ারা বেগম উত্তরা দশ নম্বর সেক্টর থেকে এসেছেন, ভেতরে মেয়ে লামিয়া। ১৪ বছর বয়স। বাসার ছয় তলার ছাদ থেকে পরে গিয়েছে দুপুর ১২টার দিকে, তারপরই তাকে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষের ভেতরে তার চিকিৎসা চলছে।

আজ ১৭ জুন (রোববার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, অন্যান্য বছরের ঈদের ছুটির এই সময়ের তুলনায় এবারে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। একই সঙ্গে ছুটির সময়ে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকার কারণেও ঢামেক হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বাড়ছে বলেন তারা। তবে এবারে হাসপাতালগুলোতে এবারে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারীদের রোস্টার অনেক বেশি সুসংগঠিত হওয়াতে রোগীদের তারা পূর্ণ চিকিৎসাটা দিতে পারছেন, চিকিৎসাসেবা নিয়েও রোগীদের অভিযোগও কম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই তিনদিনে প্রতিদিনই প্রায় হাজারের উপরে রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন যেটা অন্যান্য বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি, বলেন ডা. কিশোর সাহা। তবে এর মধ্যে ঈদের সময়টাতে ঢাকা রাস্তা ফাঁকা পেয়ে দুর্ঘটনা এবং গরমের কারণে পেটের পীড়ায় আসা রোগীর সংখ্যা বেশি জানালেন চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

ঢামেক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. কিশোর সাহা বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদের সময়ে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হওয়াতে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায় এবং এর মধ্যে বেশি থাকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে তরুণ প্রজন্মের এক ধরনের প্রতিযোগিতা গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি। ছুটি শুরু হবার পর থেকেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রোগী আসছে প্রতিদিন। অসংখ্য দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে যেন তাদের মাথাব্যথা নেই।’

একই কথা বলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. শুভ প্রসাদ দাস। তিনি বলেন, ‘কাল দিনের বেলাতে জরুরি বিভাগে প্রচুর রোগী ছিল, চিকিৎসকদের দম ফেলাবার সুযোগ ছিল না। আর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসা বেশিরভাগই মোটরবাইক দুর্ঘটনা।’

অপরদিকে, ঢাকার বাইরে থেকে আসা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আসা রোগীদের বেশিরভাগ ‘হেড ইনজুরি’ নিয়ে আসছে বলেন ডা. কিশোর সাহা।

গতকাল ঈদের দিন থেকে আজ ঈদের পরদিন সকাল থেকেই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় ছিল। সেখানে এসব রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনসহ ডা. মলয়. ডা. গৌরপদ. ডা. অমিতেশ. ডা. তন্ময়. ডা. গোবিন্দ, ডা. প্রতীপ দাস এবং ডা. অভিজিৎ।

বার্ন ইউনিটের তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকেই এই ছুটির সময়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছি। রুটিন চিকিৎসাসেবাও চলেছে। সবসময়ই এ সময়ে অমুসলিম চিকিৎসদের রোস্টারে রাখা হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে প্রয়োজনে জেষ্ঠ্য চিকিৎসকরা এসেও চিকিৎসা দিয়েছেন।’

‘এবার ঈদের দিন সকাল আটটায় এসে বসেছি, ঈদের পরদিন বিকাল সাড়ে ছয়টাতেও এই চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারিনি’, বলেন ডা. কিশোর সাহা। হাসপাতালগুলোতে এবারে চিকিৎসকদের উপস্থিতি বেশি ছিল জানিয়ে একই কথা বলেন, ডা. শুভ প্রসাদ দাস। তিনি বলেন, ‘এবারে রেসিডেন্টে চিকিৎসক এবং মধ্যম সারির চিকিৎসকদের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল এবং সিনিয়র চিকিৎসকরাও অনেক বেশি উপস্থিত ছিলেন, অনকলে ছিলেন অনেকে। চেষ্টা করা হয়েছে যেন রোগীদের ভোগান্তি কিংবা বিনা চিকিৎসার কথা না বলা হয়।’

‘গতকাল ঈদের দিনে ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে দু’টি এবং ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে চারটি। চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা পায়নি, এ কথাটা এবারে বলা যাবে না’ সারাবাংলাকে বলেন, হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. কৌশিক ভৌমিক।

তিনি আরও বলেন, ‘এবারে জরুরি বিভাগেও অনেক রোগী ছিল, শিশু সার্জারি বিভাগেও রোগী এসছে অনেক। অন্যবারে এত রোগী থাকে না, কিন্তু এবারে রোগীর চাপ ছিল বেশি, তবে চিকিৎসকদের সমন্বয় থাকাতে সবাইকে আমরা চিকিৎসা দিতে পেরেছি।’

চিকিৎসকদের কথার সত্যতা মেলে ঢামেক হাসপাতালে আসা রোগী এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে। ‘বাবার পেটের অসুখ নিয়ে ঈদের দিন বিকালে আসছিলাম, আজ দুপুরে চলে যাচ্ছি। ইসমত নামে রোগীর এই স্বজন বলেন, ‘আশঙ্কা ছিল, ছুটির সময়ে চিকিৎসকদের পাবো কিনা, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা এবার ভালো। সময়মতো চিকিৎসকদের পেয়েছি।’

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর