এওএভির সমীক্ষা
যুদ্ধ-বিগ্রহে ২০২৪ সালে বেসামরিক হতাহত ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৮
বিশ্বব্যাপী বোমা হামলা বা বিস্ফোরক সহিংসতায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজা, লেবানন ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এর প্রধান কারণ বলে বার্ষিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘অ্যাকশন অন আরমড ভায়োলেন্স (এওএভি)’ বিশ্বব্যাপী সশস্ত্র সহিংসতার ঘটনা ও প্রভাবের ওপর গবেষণা করে বার্ষিক সমীক্ষাটি তৈরি করেছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইন মাধ্যমে এওএভির সমীক্ষাটি প্রচারিত হয়েছে।
এওএভি জানায়, ২০২৪ সালে ৬১ হাজার ৩৫৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি। এটি ২০১০ সালে তাদের জরিপ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ।
বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধগুলোর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হলো গাজা-ইসরায়েল এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। ২০২৪ সালে বেসামরিক হতাহতের ৫৫ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে, যার পরিমাণ ৩৩ হাজার ৯১০ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ হতাহতের কারণ ছিল রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ। এই যুদ্ধে ১১ হাজার ৬৯৩ জন বেসামরিক লোক মারা গেছে। এ ছাড়া সুদান ও মিয়ানমারে সংঘর্ষের কারণে অনেকে হতাহত হয়েছেন।
গাজায় হামাসের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আগের বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করে, তা অব্যাহত ছিল ২০২৪ সালের পুরোটাই সময়। এ যুদ্ধের অবসান তো দূরের কথা, ইসরায়েল নতুন করে ফের যুদ্ধে জড়িয়েছে লেবানন, ইরান, সিরিয়ার সঙ্গে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে গাজার মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রকেট হামলার মাধ্যমেই মূলত এই সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গাজায় মোট ৪৩ হাজার ৬০৩ জন নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ দুই হাজার ৯২০ জন আহত হয়েছেন।
সমীক্ষার তথ্য মতে, গাজা ২০২৪ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। যেখানে মোট হতাহতের ৩৯ শতাংশ রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বছরটিতে ২৩ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়েও ৪০ শতাংশ বেশি হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা ল্যানসেট’র প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এত ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়নি। এই প্রতিবেদনের তথ্য বাস্তব চিত্রকে কোনোভাবেই প্রতিফলিত করে না।’
এওএভি-এর নির্বাহী পরিচালক ইয়ান ওভারটন সমীক্ষায় প্রচারিত তথ্যকে মর্মান্তিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সাল বিস্ফোরক সহিংসতার শিকার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একটি বিপর্যয়ের বছর। গাজা, ইউক্রেন ও লেবানন পরিস্থিতির ধ্বংসাত্মক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা যায় না।’
এওএভি তাদের হিসাব তৈরি করেছে ইংরেজি ভাষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। ২০১০ সাল থেকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করায় প্রতিবছর সহিংসতার মাত্রার তুলনা করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালে বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যা ৫১ শতাংশ বেড়ে ২৫ হাজার ১১৬ হয়েছে। আর আহতের সংখ্যা ৮১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৬ হাজার ২৩৭ জন। এওএভি মোট ১০ হাজার ১২০টি মারাত্মক ও বিপজ্জনক ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল ও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধ শুরু হয়। এওএভি’র গবেষণায় দেখা গেছে, বিমান হামলাই ছিল প্রধান হতাহতের কারণ। যা দ্বিগুণ বেড়ে ৩০ হাজার ৮০৪ হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে মিসাইল হামলা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে, যা ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩-২০১৭ সালের সিরিয়া যুদ্ধ এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটলেও, তা ২০২৪ সালের তুলনায় যথেষ্ট কম ছিল বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সারাবাংলা/এনজে/পিটিএম