‘আমরা ফ্যসিস্টদের বিচার করব না, তো কে করবে’— প্রশ্ন ফখরুলের
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৬ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয়েছে দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রশ্ন— ‘‘আমরা ফ্যসিস্টদের বিচার করব না, তো কে করবে?’’
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পতিত সরকারের বিচার প্রশ্নে নানা মহলের সন্দেহের জবাবে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন।
‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে পতিত স্বৈরাচারের বিচার করবে না। এ ব্যাপারে আপানাদের বক্তব্য কী’’— এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এগুলো ভুল কথা। রাজনৈতিক সরকার দিয়েই তো ফাঁসিগুলো হয়েছে। বিচার তো রাজনৈতিক সরকাররাই করে।’’
‘‘এই ফ্যাসিজমের কথা বলছেন। ফ্যাসিজম এগেইনেস্ট হুম? এগেইনেস্ট বিএনপি! আমাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, আর কারও ওপর হয়েছে? কারও ওপর হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা এবং জামায়াত ইসলাম সবচেয়ে বেশি অ্যাফেক্টেড হয়েছি। আমাদের ওপরই তো অত্যাচারটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। আমরা ফ্যসিস্টদের বিচার করব না, তো কে করবে? আর যেটা (বিচার) শুরু হয়েছে, এখান থেকে সরে যাওয়ার কারও কোনো উপায় নেই। অবশ্যই বিচার হবে’’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘বিচার তড়িঘড়িও করা যাবে না। তড়িঘড়ি করলে ওই বিচার কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং এটা একটা প্রক্রিয়া। এটা চলবে এবং এটাকে অবশ্যই আমরা শেষ করব। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’’
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে আমরা একটা খসড়াপত্র পেয়েছি। উনি আমাদের অনুরোধ করেছেন এ বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য। বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা একদিনের নোটিশে মতামত দেওয়া সম্ভব না। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি, আরও আলোচনা করছি। অন্যান্য দলগুলো আছে তাদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞা যারা আছেন তাদের সঙ্গেও আমাদের কথা বলতে হবে। কেননা, এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, সেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। এর যে জন্ম, সেই জন্মই কিন্ত সংস্কারের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন— এটা সবচেয়ে বড় সংস্কার, এটা একটা মৌলিক সংস্কার। ওয়ান পার্টি সিস্টেম টু মালটিপল পার্টি সিস্টেম। একটা ক্লোজ পলিটিক্যাল সিচ্যুয়েশন থেকে ওপেন পলিটিক্যাল সিচ্যুয়েশন, একটা ক্লোজ ইকোনমি সিস্টেম থেকে ওপেন ইকোনমি সিস্টেমে নিয়ে এসেছিলেন।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট এখন সবাই মানছে, আমরা যতটুকু বুঝি- এই যে কমিশন করেছে, এই কমিশনও বোধহয় কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের কথাই বলবে। এই যে ১৫ বছর ধরে আমরা বললাম, কেউ তো শুনল না। এখন তো প্রমাণ হচ্ছে আমাদের কথাই সঠিক। সেটা কিন্ত আমরা করেছিলাম। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার সরকার ইন্ট্রিডিউস করেছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগেই তো বলেছি, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত বদলাতে পারে। চেঞ্জ হতে পারে। চেঞ্জ ছাড়া তো এগোবে না। সভ্যতা এগোয় না, রাজনীতি এগোয় না, কোনো কিছুই এগোয় না। সুতরাং ছাত্রদের ঘোষণাপত্র… এটা আমাদের ওই সময়টুকু লাগবে।’’
বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়া শারিরীক দিক দিয়ে, মানসিক দিক দিয়ে আগের থেকে অনেক বেটার।’’
জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এটা হতেই পারে। প্রত্যেকটি রাজনেতিক দলের নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, আলাদা চিন্তা-ভাবনা আছে। জামায়াতে ইসলাম তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন। আমরা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি। আোদের সাথে যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছে, তাদের সকলের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেকেই একমত যে, দ্রুত নির্বাচন হওয়া দরকার। তো এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত আমাদের মধ্যে নেই। এমনকী কমিউনিস্ট পার্টিও স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তারা আমাদের সাথে নাই, তারপরও স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে ইলেকশন নিয়ে মতের পার্থক্য খুব বেশি তো দেখি না। গত কয়েকদিন আগে উনি (জামায়াতের আমির) বলেছেন যে, দ্রুত নির্বাচন করা দরকার। আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার। সুতরাং পার্থক্য তো দেখছি না।’’
বিগত সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জনসম্মুখে তুলে ধরার ইস্যুতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকে বলে আসছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তিগুলো আছে, সেই চুক্তিগুলোকে জনসম্মুখে উপস্থিত করার জন্য। এমনিতে পার্লামেন্টে করা উচিত ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি, এখন জনসম্মুখে করা উচিত এবং কোনো চুক্তিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যেটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। এটা কোনো মতেই বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। আমি ধন্যবাদ দেই এই সরকারকে যে, তারা অত্যন্ত শক্ত একটা অবস্থান নিয়েছে, যেটা এই দেশের মানুষের জন্য সম্মানজনক।’’
সারাবাংলা/এজেড/আরএস