ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই শুল্ক-ভ্যাট বাড়ানোয় ফিকির উদ্বেগ
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৯
ঢাকা: অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ না করে সম্প্রতি নানাবিধ পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) নেতৃত্ব প্রদানকারী শীর্ষ সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। নতুন এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী ব্যবসাগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশের মোট এফডিআই -এর ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে ফিকি। এর মধ্যে রয়েছে তামাক, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ উচ্চ-রাজস্ব প্রদানকারী খাতগুলো। এসব খাত সম্মিলিতভাবে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। ভ্যাট, শুল্ক ও অন্যান্য কর বৃদ্ধির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। এই পদক্ষেপ কর রাজস্ব প্রদানকারী এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী ব্যবসাগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ফিকি শুল্ক-কর বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রধান উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: প্রোকিউরমেন্ট প্রোভাইডার (ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং শতভাগ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল), মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ (ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং শতভাগ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল), পরিবহন ঠিকাদার (ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ, এবং ২০ শতাংশ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল) এবং রেস্টুরেন্ট (ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং ১০০ শতাংশ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল) করা হয়েছে।’
এতে বলা হয়, ‘ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিল্পগুলো ক্ষতি কমানোর জন্য পণ্যের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হবে। এতে করে খুচরা ক্রয়ের খরচ ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যার কারণে সাধারণ ভোক্তারা মূল্যবৃদ্ধির চাপে পড়বেন। পরিণতিস্বরূপ, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যার ফলে সরকার একটি বৃহৎ অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই, করের উচ্চ হার আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার কৌশলটি অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত ট্যাক্স নেট না বাড়িয়ে ইতোমধ্যেই উচ্চহারে কর প্রদানকারী খাত যেমন তামাক, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানির মতো খাতগুলোতে আরও বেশি পরিমাণ রাজস্বের চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
ফিকি বলছে, ‘অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে যুক্তিসংগত ও টেকসই আর্থিক ও নিয়ন্ত্রক নীতি প্রণয়নে সরকারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ফিকি। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিকির সঙ্গে সংলাপ না করা এই যৌথ অংশীদারিত্বের যাত্রায় উল্লেখযোগ্য ব্যত্যয়। পর্যাপ্ত গবেষণা বা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নীতি প্রণয়ন বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা সংশোধনের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করার বিষয়টি দেশীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিবে, যা দেশের ব্যবসার পরিবেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করবে।’
ফিকি সরকারের প্রতি সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের উচিত ব্যবসায়িক কমিউনিটির সঙ্গে স্বচ্ছ ও গঠনমূলক সংলাপকে অগ্রাধিকার দেওয়া, যাতে কর নীতি সংশোধনের প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আর্থিক দায়িত্বের সঠিক সমন্বয় সাধন করতে এবং বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বজায় রাখতে নীতিমালা তৈরিতে সকলের অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।
ফিকির প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো
সরকারকে এমন কৌশল প্রণয়ন করা উচিত, যা শিল্পগুলোর বিক্রয় দ্বারা লব্ধ আয় বৃদ্ধি করবে এবং এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় কর রাজস্বও বাড়বে। সরকারের উচিত ভ্যাট আইনের মৌলিক নীতি বজায় রাখা। একক ভ্যাট হার অনুসরণ করলে, যদি ১০০ শতাংশ ইনপুট ভ্যাট পুনরুদ্ধারযোগ্য হয়, তবে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও এর প্রভাব ন্যূনতম হবে। ইনপুট ক্রেডিট মেকানিজমটি অন্যান্য দেশগুলোর মতো সহজ করা উচিত, যাতে সমস্ত এসএমই এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের ক্রয়ের উপর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট সহজেই নিতে পারেন, মূল্য ঘোষণা (যেমন ইনপুট আউটপুট কোঅফিসিয়েন্ট) বা জটিল ভ্যাট বই পরিচালনার প্রয়োজন না পড়ে। সরকারের উচিত সকল আর্থিক লেনদেন সহজ ডিজিটাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ট্র্যাক করার উপর গুরুত্বারোপ করা। ফিকি সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এবং ব্যবসায়িক খাতের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে একটি টেকসই পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম
ফরেন ইনভেস্টরস’চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) শুল্ক-ভ্যাট