মাটি বিক্রি
মিলেমিশে আ.লীগ নেতার পাহাড় কাটছে বিএনপি নেতা!
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৮
রাঙ্গামাটি: জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বটতলী এলাকা। বরইছড়ি-ঘাগড়া আঞ্চলিক (রাঙ্গামাটি-বান্দরবান) সড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষেই রয়েছে কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার ভাই সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যার মালিকানাধীন পাহাড়।
বিগত কয়েকমাস ধরেই সড়কের পাশ থেকেই চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড়জুড়ে স্ক্যাভেটরের দিয়ে মাটি কাটার চিহ্ন। প্রায় ৩০০-৪০০ মিটার পাহাড় নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে এরই মধ্যেই। সড়কের পাশ ঘেঁষেই পাহাড় কাটা চললেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যা মালিকানাধীন পাহাড়ের মাটি কাটছেন কাপ্তাই উপজেলার লাগোয়া রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমা। বিগত দুই/তিন মাস ধরে রাঙ্গামাটি-বান্দরবান আঞ্চলিক পাশ ঘেঁষেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই দুই নেতার মিলেমিশে পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কেটে এসব মাটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়জুড়ে স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটার চিহ্ন। সড়কের পাশ থেকে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশ থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ মিটার সড়কের মতো করে পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বটতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা ধনা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার ভাই স্কুল শিক্ষক সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যার মালিকানাধীন পাহাড়ের মাটি কেটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন কাউখালীর বিএনপি নেতা অর্জুন মনি চাকমা। আর পাহাড় কাটার কাজটি করা হয় সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত। পাহাড় কাটা চক্রে বিএনপি নেতা অর্জুন মনি চাকমার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ (খ) অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটায় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই আইনে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও জাতীয় স্বার্থে পাহাড় বা টিলার কাটার প্রয়োজনীয়তা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কাটা যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বটতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড় কাটার ফলে মাটি ধসে হতাহতের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাহাড় কাটার জন্য পাহাড়ের ওপর লাগানো বৃক্ষগুলো আগেই কেটে ফেলা হয়। কাপ্তাই উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে সড়কের পাশেই এমন ধ্বংসযজ্ঞ চললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। গত বছরের নভেম্বর থেকেই প্রায় প্রতিরাত কাটা হচ্ছে পাহাড়।
পাহাড়ের মালিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে, পাহাড়ের ওই পারে একটি পাড়া রয়েছে। ওই পাড়ার মানুষজন আমাকে অনুরোধ করেছেন যে, যদি পাহাড় কেটে রাস্তার মতো করা হয় তাহলে তাদের জন্য চলাচলের সুবিধা হয়। পরে আমি বলেছি, সু্বিধা হলে মাটি কেটে নিতে। মূলত এনডিই নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে মাটি ব্যবসায়ীরা পাহাড় কেটে মাটি দিচ্ছেন। পাহাড় থেকে মাটি কাটার অনুমতি প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানি না, সেগুলো যারা কেটেছে তারা জানবে। প্রশাসনিক ও অনুমতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো যারা মাটি কাটছে (অর্জুন মনি চাকমা) তারাই দেখবে।’
তবে পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমার মুঠোফোনে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার খবর পেয়েছি। মনি চাকমা নামে একজনের নাম শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে আমাকে একটু করে জানিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। পরে বিষয়টি নিয়ে আর খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।’
পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান। অন্যদিকে, পরিবেশ অধিদফতর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মুমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাহাড় কাটার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং এ বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম