‘সংস্কার প্রতিবেদন থেকে হবে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন’
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১২
ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার প্রতিবেদন থেকে তৈরি হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এ সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো— এটা থেকে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার। এটা মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কী একা একা স্বপ্ন দেখলাম? মানুষের স্বপ্নের অংশ নেই, সেটা তো হতে পারে না। আমরা কতটুকু সে (গণঅভ্যুত্থানের) স্বপ্ন নিয়ে আসছি সেটার জন্যই এ আলোচনা। এটা বাইরে থেকে চাপানো জিনিস না; ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস। যে আলোচনা হবে, সে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন আপনারা (সংস্কার কমিশন) মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্ন একাকার হয়ে যাবে, তার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে।’
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক নোট’ বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা না, এটা একটা ঐতিহাসিক নোট। আজকের ঘটনাটা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। এর কারণটা সবাই আমরা বুঝি, কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলো সৃষ্টি হয়েছে। এত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি, এ ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরূত্থান হয়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। সেখানে থেকে ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের এ অনুষ্ঠান, সে ইতিহাসের অংশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেওয়ার বিষয় না।’
এই সনদের ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ওই যে নতুন বাংলাদেশের চার্টার; সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে; কিন্তু চার্টার হারিয়ে যাবে না। এ চার্টার থেকে যাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে। এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি সব দল এ চার্টারে সাইন অন করবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘যে চার্টার আমরা ধরে রেখেছি, তার যতকিছুই হোক, এটা যেন আমাদের হাত থেকে ছেড়ে না যায়। তা হলে এ স্বপ্নের যে কন্টিনিউটি, সেটা থাকবে কী করে? আমরা সে স্বপ্নের কন্টিনিউটি চাই, বাস্তবায়ন চাই। নির্বাচন তারই একটা অংশ হবে। চার্টারের একটা অংশ হবে। ঐকমত্যের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার তো হারিয়ে যাবে- ঐকমত্য না হলে। সেভাবেই আমরা অগ্রসর হতে চাই। কাজেই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদের সে গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং তার জন্য পরবর্তী অধ্যায় শুরু।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কি না, সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কি না, সেই ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সে অঙ্গীকারটা আমরা পূরণ করতে পারছি কি না; সেটিই আমাদের প্রশ্ন এবং আত্মবিশ্বাস যে, আমরা পারব। আজকের যে রিপোর্টগুলো আমরা হাতে নিলাম, ডেফিনেটলি এটা ইন্টেলেকচুয়াল- একটা বড় এক্সারসাইজ দেশের জন্য। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু আজকের গুরুত্বটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজের জন্য না। আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পেরেছি কি না, সেটাই প্রশ্ন। কাজেই আমাদের বিচার (মানদণ্ড) হবে, আমরা সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছি কি না। আজকে তার (সেই স্বপ্নের) যাত্রা শুরু হলো।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম