ঢাকা: শেষের পথে রয়েছে হযরত শাহজহালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণের কাজ। কিন্তু এখনো কিছু কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে সেগুলো নির্ধারিত মেয়াদেই শেষ হবে কি না- তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও কার্গো চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সেফটি ও সিকিউরিটির মান বজায় রেখে টার্মিনাল সুবিধাদি বাড়বে। এছাড়া টার্মিনাল ইক্যুইপমেন্ট এবং সিকিউরিটি ইক্যুইপমেন্টসহ নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং (৩য় টার্মিনাল), নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স, নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স, টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কারপার্কিং সুবিধা বাড়বে।
সম্প্রতি (২৯ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত কাজের ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ।
পিএসসি সভা সূত্র জানায়, এখনো আট ধরনের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-বর্তমানে প্রকল্পে স্থাপিত ইক্যুইপমেন্ট, সিস্টেমস গুলোর টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং কাজ চলমান রয়েছে। তবে কাস্টমসের স্ল্যানিং মেশিন সংস্থাপন কাজ বাকি রয়েছে। বহুতল কারপার্কিং অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ের সাউথ ও নর্থ উভয় অংশের কাজ শেষে বর্তমানে অপারেশনে (ব্যবহার) রয়েছে। সাউথ অংশের কানেকটিং কাজ শেষ রয়েছে। শীঘ্রই ট্রেক্সিওয়েগুলো বিমানবন্দরে অপারেশনে সংযুক্ত হবে। বর্তমানে এপ্রোন মার্কিং কাজ চলমান রয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো ও ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের ফিনিশিং কাজ চলছে। বর্তমানে টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলছে। বর্তমানে ইক্যুইপমেন্টের টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে।
সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, দেশের ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও কার্গো চাহিদা মিটানো, আন্তর্জাতিক সেফটি ও সিকিউরিটির মান বজায় রেখে টার্মিনাল সুবিধাদি বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। টার্মিনাল ইক্যুইপমেন্ট এবং সিকিউরিটি ইক্যুইপমেন্টসহ নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং (৩য় টার্মিনাল), নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স, নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স, টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কারপার্কিং, চেক-ইনকাউন্টারসহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগসুবিধা যুক্ত কাজ শেষ করা হয়েছে।
পিএসসি সভায় বলা হয়, বিল্ডিং নির্মাণ অংশের বেসমেন্ট এরিয়া, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে স্থাপিত ইক্যুইপমেন্ট, সিস্টেমসগুলোর টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে। তবে কাস্টমস এর স্ল্যানিং মেশিন সংস্থাপন কাজ বাকি রয়েছে। বহুতল কার পার্কিং অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। কার্ব-সাইড ও এলিভেটেড ড্রাইভওয়ে অংশের গার্ডার স্থাপন, ডেক-স্ক্যাব ঢালাই ও উত্তর প্রান্তের র্যাম্প নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ প্রান্তের র্যাম্পের কাজ চলছে। টানেল অংশের সকল কাজ শেষ হয়েছে। হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ের সাউথ ও নর্থ উভয় অংশের কাজ শেষে
বর্তমানে অপারেশনে রয়েছে। সাউথ অংশের কানেকটিং কাজ শেষ রয়েছে। শীঘ্রই ট্রেক্সিওয়েগুলো বিমানবন্দরে অপারেশনে সংযুক্ত হবে। মূল এপ্রোন অংশে কনক্রিট (এলএমসি ও পিসিসি) কাজ ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এপ্রোন অংশের আন্ডারগ্রাউন্ড ফুয়েল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এপ্রোন মার্কিং কাজ চলমান রয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো ও ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের ফিনিশিং কাজ চলছে। কার্গো হ্যান্ডলিং সিস্টেম স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলছে। ইউটিলিটি বিল্ডিংস অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ইক্যুইপমেন্টের টেস্টিং ও কমিশনিং সহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সভায় বলেন, প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উপর মন্ত্রণালয় থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তার জবাব দ্রুত পাঠানো হবে। এ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপারেশন কাজ চালু করা। এরমধ্যে টিএসআর (ট্রানজেকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টিএসআর অনুমোদন হলেই পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রজেক্ট ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাপানিজ কোম্পানিজগুলোর সঙ্গে নেগোশিয়েশন শিগগিরই শুরু হবে।
সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) বলেন, প্রকল্পের কাজের কিছু সংখ্যক ভেরিয়েশন ডিসপুট রয়েছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এ ডিসপুটে উত্থাপিত ইস্যুগুলোর জন্য এরই মধ্যে সদস্য (অর্থ) এর সভাপতিত্বে ইস্যুগুলো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব খাদিজা পারভীন বলেন, প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক বদল হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে নতুন প্রকল্প পরিচালকের সই সত্যায়ন করে প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো প্রয়োজন।