মন্ত্রণালয়ের বিধান উপেক্ষা করে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পদোন্নতি
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০৮ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৭
ঢাকা: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার বা পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার দাবি তুলে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মেধাভিত্তিকের পাশাপাশি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে পদোন্নতির জন্য কখনো কখনো ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ বা জিম্মি করে দাবি আদায়ে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগও শোনা যায়। এ ছাড়া ব্যাংকের বৈধ সিবিএ সংগঠনের বাইরে রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে বোনাস প্রদানেরও দাবি জানানো হচ্ছে। এসব কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নতুন করে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং এর ফলশ্রুতিতে আগামীতে ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, সহকারী ব্যবস্থাপক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও উপ মহাব্যবস্থাপক পদে এ ধরনের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিজ নিজ সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে সুপারনিউমেরারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনেও ব্যাংক খাতে জনবল নিয়োগ ও যে কোনো প্রকার পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকে অফিসার, সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে ২ হাজার ২০০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ সৃষ্টি করে প্রায় ৪শ’ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান ‘নিয়মের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে’ দাবি করে পত্রিকান্তরে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন পদোন্নতিতে একটি জটলা ছিল। এ জন্য নিয়মের মধ্যে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যাংকের জন্য ভালো হবে। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আরও উৎসাহিত হবেন। ব্যাংকে কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে।’
এদিকে পদোন্নতির রেশ না কাটতেই ‘জিয়া পরিষদ’ সোনালী ব্যাংক পিএলসি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সমাপ্ত ২০২৪ সালে ব্যাংকের অর্জিত মুনাফা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮টি ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন রাখার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে গত ২ জানুয়ারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির রেশ ধরে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পান। এর মধ্যে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ সৃষ্টি করে অগ্রণী ব্যাংকের ৪০ জনেরও বেশি জনকে এবং রূপালী ব্যাংকের ৯০ জন সহকারী মহাব্যবস্থাপককে উপমহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
পদোন্নতির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপালী ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, একই পদে পাঁচ বছর বা ততোধিক সময়কাল বিবেচনা, কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি ও ব্যাংকের কাজে গতিশীলতা আনয়নে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর তারিখ থেকে এ পদোন্নতি কার্যকর করা হয়েছে।
পদোন্নতির বিষয়ে জানতে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের তোয়াক্কা করছে না ব্যাংকগুলো। কোনো একটি ব্যাংক বিধি-বহির্ভূত কোনো কাজ করলে অন্যরা তাকে অনুসরণ করছে। এটি বড়ই উদ্বেগের বিষয়। আর বঞ্চিত বলে যাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে।
সারাবাংলা/আরএস