ঢাকা: ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘আদিবাসী’ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। আত্মপরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে তারা নৃশংসভাবে হামলার শিকার হলো। ঢাকার রাস্তায় রক্ত ঝরলো। এই ঘটনার বিচার হবে কিনা জানি না। এই দেশে জাতিগত নিপীড়ন, নৃশংসভাবে হামলা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) শাহবাগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শেষে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যরা এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও ‘আদিবাসী’ ছাত্রজনতা একত্রে একটি মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে কাটাবন ঘুরে টিএসসিতে এসে শেষ করেন।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রেসিডেন্ট অংকন চাকমা সঞ্চালনায় বক্তব্য রেখেছেন সিপিবির রাজনৈতিক নেতা আবদুল্লাহ কাফী, গবেষক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসউদ ইমরান মান্নু, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা এবং অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। পুলিশি হামলার শিকার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ইভান তাহসীব ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তৈয়ব ইসলাম নিজেদের অভিজ্ঞতা বলেন।
সমাবেশে অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং তার পরে এই শহরের বহু তরুণরা তাদের হাত দিয়ে বিভিন্ন রঙ বেরঙের গ্রাফিতি তৈরি করেছে। সেই গ্রাফিতিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে এক নতুন বাংলাদেশের কথা। যে বাংলাদেশে স্বৈরশাসন থাকবে না, থাকবে না কোনো বৈষম্য। সে বাংলাদেশ হবে বৈচিত্রের, সব মানুষের। কিন্তু তাদের সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আকাঙ্ক্ষার কোনো মিল দেখতে পারছি না। তারা বৈষম্যবাদী ও বৈচিত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। জনগণের যা প্রয়োজন তাকে অস্বীকার করার প্রবণতা সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাসের পর মাসের বকেয়া মজুরির দাবি জানাতে গিয়ে গুলিতে মরতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এই সরকারের সময়ে এসব আমরা আশা করিনি। এখনো অনেক কারখানা বন্ধ, যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার রয়েছে তা নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।’
গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন জাতি ও ভাষার মানুষ ও নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ থাকার ব্যাপার স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে নারীবিদ্বেষী এবং বিভিন্ন জাতি ও ভাষার মানুষের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘আদিবাসী’ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলো। এনটিসিবি শিক্ষার্থীদের দেয়ালে আঁকা যে গ্রাফিতিটি বইয়ে সংযুক্ত করেছিল তা বাদ দিয়েছে ‘আদিবাসী’ শব্দটির জন্য। ‘আদিবাসী’ নিয়ে দমন নিপীড়নের রাজনীতির জাল বিস্তৃত রয়েছে।’
হামলার নিন্দা জানিয়ে গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘দুই হাজার শহিদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সেখানে আত্মপরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে ‘আদিবাসী’দের ওপর নৃশংসভাবে হামলা করা হলো। ঢাকার রাস্তায় রক্ত ঝরল। এই ঘটনার বিচার হবে কিনা জানি না। এই দেশে জাতিগত নিপীড়ন, নৃশংসভাবে হামলা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। আমরা এই বাংলাদেশ চায়নি। আবার নতুন করে লড়াই শুরু করতে হবে।’
শেখ হাসিনা সরকারের মতোই এ দেশে একের পর এক ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ধরনের মতামত ছাড়া নজিরবিহীনভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে।’